ইমিগ্রেশন আটককৃতদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, তা অবিচারপূর্ণ ও বেআইনি বলে রায় দিয়েছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের হাই কোর্ট। মামলাটি ছিল আর (একেএ) বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী [২০২৫] ইডাব্লিউএইচসি ১৬৫১ (অ্যাডমিন)।
আবেদনকারী ব্যক্তি ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ইমিগ্রেশন আইনের আওতায় আটক ছিলেন। তিনি গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত এবং মানব পাচারের সম্ভাব্য শিকার হিসেবে স্বীকৃত। ২০২৩ সালের জুন মাসে তার পক্ষে ব্রুক হাউস ও হারমন্ডসওর্থ আটক কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক ও ভয়ভীতিমূলক ব্যবহারের অভিযোগ দাখিল করা হয়।
৫ মে’র একটি ঘটনায় বলা হয়, আবেদনেরকারীকে দাঙ্গা দমন ইউনিটের ঢাল ও সুরক্ষা পোশাকে সজ্জিত বাহিনী জোর করে পৃথকীকরণ ইউনিটে নিয়ে যায়, যা তার জন্য ছিল চরম মানসিক আঘাতের কারণ। এসব অভিযোগ তদন্ত করে হোম অফিসের প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ডস ইউনিট (পিএসইউ), যারা হোম অফিস কর্মী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দেখাশোনা করে।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় পিএসইউ সিসিটিভি ফুটেজ বা সাক্ষ্যপ্রমাণ আবেদনকারীকে না দিয়ে শুধুমাত্র অভিযুক্ত পক্ষকে প্রমাণ দেখার সুযোগ দেয়। এক্ষেত্রে পিএসইউ দাবি করে যে এটি তাদের “সাধারণ প্রক্রিয়া” এবং যেহেতু অভিযোগকারী নিজেই ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাই ফুটেজ তার প্রয়োজন নেই। তারা আরও জানায়, কিছু প্রমাণ ঠিকাদারদের মালিকানায় থাকায় তা প্রকাশ করা যায় না।
২০২৩ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পিএসইউ চারটি অভিযোগের তদন্ত শেষ করে। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগ পুরোপুরি খারিজ করা হয়, এবং একটি অভিযোগ—৫ মে’র ঘটনা—আংশিকভাবে গ্রহণ করা হয়, যেখানে অতিরিক্ত সংখ্যক কর্মী উপস্থিত থাকা অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে প্রতিটি সিদ্ধান্তেই যে প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা আবেদনকারীকে দেখানো হয়নি।
আবেদনকারী আদালতে অভিযোগ জানান যে, এই প্রক্রিয়া তার আইনি ন্যায্যতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তিনি তিনটি আইনি ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ জানান—১) ন্যায্যতা ও প্রাকৃতিক বিচার নীতির লঙ্ঘন, ২) মানসিক প্রতিবন্ধিতা বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া, এবং ৩) নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের বাধ্যবাধকতা।
আদালত রায়ে জানায়, আবেদনকারীকে প্রমাণ দেখার সুযোগ না দিয়ে তাকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার ফলে কমন ল’ অনুসারে তার প্রক্রিয়াগত ন্যায্যতা লঙ্ঘন হয়েছে। বিচারক বলেন, পিএসইউ-এর তথাকথিত “সাধারণ প্রক্রিয়া” প্রকৃতপক্ষে একটি স্থায়ী ও কঠোর নীতি, যা প্রত্যেক ক্ষেত্রে একইভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।
বাকি দুটি অভিযোগ আদালত খারিজ করে দেয়।
এই মামলার পর হোম অফিসের “ডিটেনশন সার্ভিসেস অর্ডার ০৩/২০১৫” নীতিমালাটি দুইবার সংশোধন করা হয়েছে। এখন থেকে তদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন অভিযোগকারীকে সরবরাহ করতে হবে বলে নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তে ব্যবহৃত প্রমাণ—যেমন ভিডিও ফুটেজ—প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে এখনো কোনো আপডেট আসেনি।
এই রায়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। নীতিগত পরিবর্তন সত্ত্বেও অভিযোগকারীদের প্রমাণ দেখার অধিকার সুনিশ্চিত না হলে, এমন অভিযোগ তদন্তে বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা কঠিন হবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট
এম.কে
১১ জুলাই ২০২৫