কাতারের ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি আরবের সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল। সেই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলের ‘একমাত্র মিত্র’ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করেছেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) আরব নিউজের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রিয়াদের কূটনৈতিক প্রাসাদে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রদূতদের নৈশভোজে বক্তব্য দেন তিনি।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার সময় কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করাকে তিনি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেন। উপসাগরীয় দেশগুলো মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার খবর আগে থেকেই জানত, কিন্তু তাদের আগে থেকে জানানো হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোকে নিরাপত্তার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হুমকি এলে জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য কাতারে আক্রমণটি আমাদের চোখ খুলে দেয়। এটি আমাদের রাষ্ট্রগুলোকে হুমকির ধরণ পুনর্বিবেচনা করতে এবং এমন হুমকি মোকাবেলা করার জন্য কৌশলগত নীতি পুনর্গঠন করতে নির্দেশ দেয়। ইসরায়েলকে এভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত নয়।
যুবরাজ ফিলিস্তিন-ইসরায়েলি শান্তি প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বের অন্য কোনো অঞ্চল বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব এত বেশি অনুভব করেনি। চলমান এই পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী, তা একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন। যদিও এই অঞ্চলের দেশ ও নেতারা একটি বড় দায়িত্ব বহন করে; যুক্তরাষ্ট্র এই দায়িত্বের সবচেয়ে বড় অংশ বহন করে।
ইসরায়েলের কূটনীতিক বিচ্ছিনতা নিয়ে সৌদির প্রিন্স বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমেরিকা ইসরায়েলের একনিষ্ঠ মিত্রের ভূমিকায় নেমে আসছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে তাদের সাম্প্রতিক গণহত্যা যুদ্ধের ক্ষেত্রে আমেরিকা যে স্পষ্ট দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করছে, তা কেবল আরবরাই নয়, বরং পুরো বিশ্ব স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করছে।
এ সময় তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরামর্শ দেন, ‘শান্তির দূত হতে চাইলে তার উচিত তার বন্ধু ও মিত্রদের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য করা অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করা।’
পশ্চিমা শক্তিগুলোর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রিন্স তুর্কি।
তিনি বলেন, সৌদি আরব, ফ্রান্স এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সকল দেশ অনেক তিরস্কারের মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ তা নাকি হামাসকে পুরস্কৃত করে। ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা খুবই প্রতারণামূলক এবং খারাপ দাবি। ইসরায়েলের ৮০ বছরের ঔপনিবেশিক দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের অস্বীকৃতিই হামাস ও এ ধরনের অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোকে পুরস্কৃত করে। দখলদারিত্ব না থাকলে, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধও থাকত না।
সূত্রঃ আরব নিউজ
এম.কে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫