যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা শত শত অভিবাসী শিশুকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে সরকারি হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন পদক্ষেপের ফলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এই শিশুরা।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই শিশুদের মুক্তি পাওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক কঠিন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার শীর্ষ সহযোগীরা দাবি করছেন, বাইডেন প্রশাসনের সময় যেসব শিশু দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অভিভাবক ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিলো, তাদের যথাযথভাবে নজরদারি করা হয়নি। এমন ‘অগণিত’ শিশু রয়েছে বলে দাবি করে ট্রাম্প প্রশাসন।
বাইডেন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারা অবশ্য এই দাবি নাকচ করেছেন। তারা বলছেন, ২০২১ সালে শিশুরা বিপুল সংখ্যায় আসায় ফেডারেল ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি হলেও, এটা নজিরবিহীন ঘটনা ছিল না।
অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে ‘হাজার হাজার শিশু নিখোঁজ হয়েছে’ এই ধারণাকে সামনে রেখে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু করেছে এক বড় ধরনের অভিযান। এর আওতায় তৈরি হয়েছে একটি অস্থায়ী ‘ওয়েটিং রুম’, যেখান শিশুদের সংবেদনশীল তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সারাদেশে শিশুদের বাসায় পাঠানো হচ্ছে ফেডারেল কর্মকর্তাদের দলকে। তিনটি পৃথক সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) প্রায় ৫০০ শিশুকে সরকারের হেফাজতে নিয়েছে।
এই ধরনের পদক্ষেপ বিগত সময়ের তুলনায় নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি এর সঙ্গে জড়িত এফবিআই এর কিছু কর্মকর্তাও এ ঘটনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এসব অভিযান মূলত অভিভাবকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার অংশ।
এদিকে, শিশুদের সরকারি হেফাজত থেকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করছেন মানবাধিকার কর্মী, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তারা। বর্তমানে ২,৫০০–এরও বেশি শিশু যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। আগের তুলনায় এখন শিশুদের দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে হচ্ছে।
নতুন নীতির কারণে অভিভাবকদের পক্ষে শিশুদের কাছে পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন তার প্রথম মেয়াদেও দক্ষিণ সীমান্তে শিশুদের পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলো। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে সেই নীতি আরও কঠোর রূপ নিয়েছে, যেখানে সরাসরি পরিবার থেকেই শিশুদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এই পদক্ষেপ শিশুদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এন্ড্রু নিক্সন বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ম্যান্ডেট ফিরে আনছি যা আগের প্রশাসনে উপেক্ষিত ছিল। কেউ যদি ন্যূনতম নিরাপত্তা মানদণ্ডে পাশ না করে, তাহলে তার শিশুদের দেখভালের অধিকার নেই।’
২০২৪ সালের ইন্সপেক্টর জেনারেল এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাচাই প্রক্রিয়া ঠিকমতো সম্পন্ন হলেও, ১৬ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সুরক্ষা যাচাইয়ের নথিপত্র ছিল না। যা গোটা প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন
এম.কে
০৪ জুন ২০২৫