-0.5 C
London
January 8, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

যুদ্ধের মাঠে কতটা ভয়ংকর হবে চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের ‘রহস্যময়’ যুদ্ধবিমান

২৬ ডিসেম্বর মাও সেতুংয়ের জন্মদিনে চীনের আকাশে দেখা গেছে উন্নত নকশার ‘রহস্যময়’ একটি যুদ্ধবিমান। প্রথমবারের মতো এই বিমান উড্ডয়নের ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা উঠতে শুরু করে। চীন এখনো বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। তবে সামরিক কর্মকর্তাদের মৌন সম্মতির বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

চীনা বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, এটিই হবে প্রথম ষষ্ঠ প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট। এটি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বব্যাপী সকল উন্নত মানের যুদ্ধবিমানকে ছাড়িয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন যুদ্ধবিমানটিতে যুগান্তকারী কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এটি আধুনিক যুদ্ধের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে। যদিও নাম কী হবে, কিংবা কোন মডেলের, তা এখনো জানা জায়নি।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, চীনে ষষ্ঠ প্রজন্মের বিমান তৈরি করা হচ্ছে। তারা এর নাম দিয়েছেন ‘জে-৩৬’। এসব বিমানে অনেক নতুন প্রাণঘাতী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ষষ্ঠ প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেটটি ‘হাইপারসনিক গতিতে’ ছুটতে পারে। এটিতে থাকতে পারে ‘আরও বেশি স্টিলথ ক্ষমতা’। দুটি বিমানই রাডার সনাক্তকরণ কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট জন ওয়াটার্সের ভাষ্য, যুদ্ধবিমানটির পেছনের দিকে কোনো পাখা নেই। এর ফলে সেটির রাডারের চোখ ফাঁকি দেওয়ার বা স্টেলথ সক্ষমতা বাড়বে।

নতুন যুদ্ধবিমানটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ‘বি-২১ রাইডার’ বোমারু বিমানের সঙ্গে তুলনা করেন ওয়াটার্স। তিনি বলেন, বড় যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশলে চালানোর সক্ষমতা কম থাকাটা কোনো সমস্যা নয়। কারণ সেগুলো আকাশে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয় না।

মার্কিন বি-২১ বোমারু বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নর্থরপ গ্রুম্যানের সাবেক কর্মকর্তা বিল সুইটম্যান বলেন, দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধের গুরুত্ব কমছে। ‘জে-৩৬’ এর মূল কাজ হবে আকাশ, মাটি ও বিমানবাহী রণতরিতে থাকা যুদ্ধবিমান, জ্বালানি তেলবাহী উড়োজাহাজ ও সহায়তাকারী বিভিন্ন উড়োজাহাজের মতো শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তুগুলোয় হামলা চালানো।

অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইউয়ান গ্রাহাম বলেন, নকশাগুলো চীনের এভিয়েশন শিল্পের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উদ্ভাবনের ইচ্ছার প্রতিফলন। ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, এটি অত্যন্ত মৌলিক নকশা বলে মনে হচ্ছে। এর জন্য তাদের প্রশংসা প্রাপ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের দীর্ঘস্থায়ী আত্মতুষ্টি ঝেড়ে ফেলা উচিত।

চীনা এই যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে রাশিয়ার তৈরি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমানের বেশ মিল রয়েছে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পিটার লেটন। তিনি বলেন, চীনের যেসব স্থানের ভূপৃষ্ঠে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই, সেখানকার আকাশসীমার প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবে যুদ্ধবিমানটি। আকাশে না উড়েও ধ্বংস করতে পারবে দূরের হুমকিগুলো।

কোনো কোনো বিশ্লেষকের ধারণা, ৪৫ হাজার কেজির বেশি ওজন নিয়ে আকাশে উড়তে পারবে ‘জে-৩৬’, যা মিগ-৩১ এর চেয়ে বেশি।

নিউজিল্যান্ডভিত্তিক বিশ্লেষক লু গুয়ো-ওয়েই মনে করেন, ‘জে-৩৬’ এর নকশা দেখে মনে হচ্ছে, এটি ভারী অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারে। এই যুদ্ধবিমান পিএল-১৭ এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে, যা সর্বোচ্চ ৪০০ কিলোমিটার দূরে আকাশে থাকা লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে। ভারী এসব অস্ত্র নিয়ে শব্দের চার গুণের বেশি গতিতে ছুটে চলতে পারবে বিমানটি।

তিনি মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে বিমানটি সম্মুখসারিতে থাকা ড্রোন, জে-২০ যুদ্ধবিমান ও জে-৩৫ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করবে। এর মাধ্যমে প্রচলিত আকাশপথে যুদ্ধ আরও তথ্যভিত্তিক ও সমন্বিত হবে। এছাড়া ‘জে-৩৬’ এর অত্যাধুনিক রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে পারে। দূরে থাকা যুদ্ধবিমানগুলো শনাক্ত করতে পারবে, যা শক্তি বাড়বে চীনা বাহিনীর।

প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিনেন্স (এনজিএডি) কয়েক বছর ধরে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নিয়ে কাজ করছে। ইউরোপ এবং এশিয়া গ্লোবাল কমব্যাট এয়ার প্রোগ্রামের অধীনে ষষ্ঠ প্রজন্মের বিমান নিয়ে আলোচনা করছে।

সূত্রঃ দ্য ইকোনমিক টাইমস

এম.কে
০৭ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

এবছর থেকে যুক্তরাজ্যে ভারতীয়দের থাকা ও কাজের সুযোগ বাড়ছে

গভীর হতাশায় ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া মুসলিমরা

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির পরোয়ানাকে সমর্থন ব্রিটেন, ইতালি ও স্পেনের