ব্রিটেন এখন আর নিরাপদ নয়। যুদ্ধ ঘোষণা না করেও দেশটি এক অদৃশ্য সংঘাতের ভেতর ঢুকে পড়েছে। প্রতিদিন শত্রু রাষ্ট্রের ছায়াযুদ্ধে আক্রান্ত হচ্ছে ইংল্যান্ড—গোপন নাশকতা, সাইবার হামলা, ভুয়া তথ্য ছড়ানো এবং গুপ্তচরবৃত্তির মধ্য দিয়ে।
পার্লামেন্টের শক্তিশালী ‘ডিফেন্স কমিটি’র সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন “ডিফেন্স ইন দ্য গ্রে জোন” এক চরম বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে ব্রিটেনকে। এতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য এখন এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে শান্তি ও যুদ্ধের সীমানা মিলেমিশে গেছে।
প্রতিবেদনে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়াকে প্রধান হুমকি বলা হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং ব্রিটেনের পক্ষ থেকে কিয়েভকে সমর্থন করার পর থেকেই মস্কোর শত্রুভাবাপন্ন আচরণ আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। রাশিয়া এখন সরাসরি যুদ্ধ নয়, বরং ছায়াযুদ্ধ বা হাইব্রিড যুদ্ধের পথে ব্রিটেনকে নিঃশব্দে আঘাত করছে।
শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নয়, এই হুমকি ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটেনের প্রতিটি নাগরিকের জীবনে। এমনকি শিশুদেরও শেখানো হচ্ছে কিভাবে সাইবার হুমকি মোকাবিলা করতে হয়। ডিফেন্স কমিটির মতে, এই যুদ্ধে বিজয় পেতে হলে “পুরো সমাজ”কে একত্র হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সাবমেরিন ইন্টারনেট ক্যাবল, যা ব্রিটেন, ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে তথ্য যোগাযোগের প্রাণভোমরা, সেগুলোকেও রাশিয়া টার্গেট করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এসব কৌশলগত আক্রমণ এখন আর ভবিষ্যতের ভয় নয়—এগুলো বর্তমানের বাস্তবতা।
রিপোর্টটি বলেছে, “গ্রে জোন আক্রমণের গতি, পরিমাণ ও তীব্রতা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে।” এই ধরণের হামলায় রাষ্ট্র নিজেকে আড়াল করতে পারছে—ব্যবহার করছে উগ্রপন্থী গোষ্ঠী, সাইবার অপরাধী চক্র এবং তথাকথিত হ্যাক্টিভিস্টদের। এতে একদিকে যেমন দায় এড়ানো যাচ্ছে, অন্যদিকে ব্রিটেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে (MOD) আহ্বান জানানো হয়েছে সারা দেশের স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা, স্থানীয় কমিউনিটি ও নাগরিক সমাজকে নিয়ে একটি সম্মিলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য। লক্ষ্য শুধু সামরিক বাহিনী নয়, নাগরিকরাও যেন এই যুদ্ধে নিজেদের ভূমিকা পালন করে।
MOD প্রস্তাব করেছে, স্কুলপড়ুয়া শিশুদেরও অনলাইনে নিরাপদ থাকা, সাইবার হুমকি চেনা এবং ডিজিটাল প্রতিরোধ গড়ে তোলার শিক্ষা দিতে হবে। এছাড়াও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও র্যানসমওয়্যার প্রতিরোধ ও তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিফেন্স কমিটির চেয়ারম্যান, লেবার পার্টির এমপি তান ধেসি বলেন, “এই যুদ্ধ আর দূরের নয়। গ্রে জোন হুমকি এখন প্রতিটি মানুষের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে এই আক্রমণ।”
তিনি আরও বলেন, “শত্রুরা আমাদের সমাজের প্রতিটি দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আমরা যদি এখনই প্রতিরোধ না গড়ি, তাহলে আগামী দিনে এর মূল্য হবে ভয়াবহ।”
ডিফেন্স কমিটি সতর্ক করে বলেছে, এখন যে সময় চলছে তা আর শান্তির সময় নয়—এটি যুদ্ধের পূর্বলগ্ন। সরকার, সেনাবাহিনী, নাগরিক—সবার সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া এই ছায়াযুদ্ধ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। যদি সমাজ প্রস্তুত না হয়, তবে বাস্তব যুদ্ধ কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
সূত্রঃ মিরর
এম.কে
০৯ জুলাই ২০২৫