হোয়াইট হাউসে সদ্যসমাপ্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সামনে একটি বিতর্কিত ভিডিও উপস্থাপন করেন। ভিডিওতে ট্রাম্প দাবি করেন—দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে এবং তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বলেন, “এই ভিডিওতে হাজার হাজার সাদা ক্রস দেখা যাচ্ছে—সবই নিহত শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের স্মৃতিতে।”
জবাবে বিস্মিত রামাফোসা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এটা কোথায়? আমি এমন কিছু কখনো দেখিনি।” ট্রাম্প পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, “এটা দক্ষিণ আফ্রিকায়।”
তবে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা ট্রাম্পের অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমি বারবার যা বলেছি তা আর পুনরাবৃত্তি করব না। শুধু বলব, যদি সত্যিই কোনো আফ্রিকানার গণহত্যা চলত, তাহলে আমার সঙ্গে এই তিনজন সম্মানিত কৃষক প্রতিনিধি এবং কৃষিমন্ত্রী এখানে থাকতেন না।”
বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা রয়টার্স তাদের ফ্যাক্ট-চেক রিপোর্টে বলেছে, ট্রাম্পের এই দাবি “মিথ্যা”।
তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ট্রাম্প যেসব ভিডিও এবং তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ভিত্তিহীন।
রয়টার্স জানায়, ২০২৪ সালের পরিসংখ্যানে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট ২৬ হাজারের বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে মাত্র ৮টি কৃষক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানারদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় কোনো জাতিগত শ্বেতাঙ্গ নিধনের পরিকল্পিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সহিংসতা এবং অপরাধ সমস্যা রয়েছে, তবে তা জাতি নির্ভর নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিতর্কিত ভূমি সংস্কার আইন ও অভ্যন্তরীণ জমি পুনর্বণ্টন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তোলার চেষ্টা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, “আপনি প্রেসিডেন্ট রামাফোসার কাছে এই পরিস্থিতি নিয়ে কী করতে চাইছেন?”
জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি জানি না। আমি সত্যিই জানি না।” এরপর তিনি কাগজের একটি স্তূপ তুলে ধরে বলেন, “এই কদিনে যেসব প্রতিবেদন বেরিয়েছে—সবই মৃত্যু, সহিংসতা, আতঙ্ক।”
এই ঘটনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফের আলোচনায় এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ জমি ও কৃষক নিরাপত্তা ইস্যু। তবে রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ফ্যাক্ট-চেক স্পষ্ট করেছে—ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’র দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
২২ মে ২০২৫