12.6 C
London
December 18, 2024
TV3 BANGLA
দক্ষিণ এশিয়া

রামমন্দির উদ্বোধনের দিনে নওমুসলিম বলবির সিংয়ের হারিয়ে যাওয়ার গল্প

গত ২০২১ সালের ২৩ জুলাই মারা গিয়েছিলেন বাবরি মসজিদ ভাঙায় অংশ নেওয়া নওমুসলিম মুহাম্মদ আমির উরফে বলবির সিং। হায়দারাবাদ প্রদেশের তেলাঙ্গানার ভাড়া বাসায় তার সন্দেহজনক মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছিল তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো বার্তা পাওয়া যায় নাই, পুলিশ বিভাগের তদন্ত খুব বেশি আগায় নাই বলে স্থানীয় লোকেদের তথ্যমতে জানা যায়।

২৭ বছর আগে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের মাথায় উঠে যারা শাবল দিয়ে আঘাত করেছিলেন তাদের একজন ছিলেন বলবির সিং। এক সময় শিবসেনার সক্রিয় এই কর্মী মুসলিম হয়েই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

মৃত্যুর পূর্বে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে নিজের মনের বিভিন্ন কথা খুলে বলেন বলবির সিং। প্রতিবেদকের সাথে অতীতের স্মৃতি রোমন্থন কর‍তে গিয়ে তিনি বলেন, বাবরির মাথায় শাবলের ঘা দেওয়ার পর সব খুইয়েছিলাম আমি।

বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর বাড়ি ফিরে শুনেছিলেন, বাবা নাকি বলে গিয়েছিলেন, বলবিরের মুখ যেন বাড়ির কেউ আর না দেখেন। এমনকী, বলবিরকে যেন তার মুখাগ্নিও করতে না দেওয়া হয়।

বলবির বলেছেন, সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তার পরিবার কোনও দিনই উগ্র হিন্দু ছিলেন না। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইংরেজি এই তিনটি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি পাওয়া বলবির তার মা, বাবা, ভাই বোনদের নিয়ে ছোটবেলায় থাকতেন পানিপথের কাছে খুব ছোট্ট একটা গ্রামে। বলবিরের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তিনি ও তার ভাইদের পড়াশোনার জন্য বলবিরের বাবা দৌলতরাম তাদের নিয়ে চলে যান পানিপথে।

বলবির সাক্ষাৎকারে আরো জানিয়েছিলেন, ‘আমার বাবা বরাবরই গান্ধীবাদে বিশ্বাসী। তিনি দেশভাগ দেখেছিলেন। তার যন্ত্রণা বুঝেছিলেন। তাই আমাদের আশপাশে যে মুসলিমরা থাকতেন, উনি তাদের আগলে রাখতেন সব সময়। কিন্তু পানিপথের পরিবেশটা ছিল অন্য রকম। হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা লোকজনরা তেমন মর্যাদা পেতেন না পানিপথে।’

ফলে একটা গভীর দুঃখবোধ সব সময় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত বলবিরকে। সেই পানিপথেই একেবারে অচেনা, অজানা আরএসএসের একটি শাখার কর্মীরা বলবিরকে দেখা হলেই আপনি, আপনি বলে সম্বোধন করত।

বলবির বলেন, ‘সেটাই আমার খুব ভালো লেগেছিল। সেই থেকেই আরএসএসের সঙ্গে আমার উঠা বসা শুরু হয়। শিবসেনা করতে করতেই বিয়ে করি। এম.এ করি রোহতকের মহর্ষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওই সময় প্রতিবেশীরা ভাবতেন আমি কট্টর হিন্দু। কিন্তু বাবা কোনও দিনই মূর্তি পূজায় বিশ্বাস করতেন না। আমরা কোনও দিনই যেতাম না মন্দিরে। বাড়িতে একটা গীতা ছিল ঠিকই, কিন্তু আমি বা আমার ভাইয়েরা কেউই সেটা কখনও পড়িনি।

শিবসেনার লোকজনদের কাছ থেকে ‘সম্মান’ পেয়ে তাদের ভালো লেগে যায় বলবিরের। শিবসেনাই তাকে অযোধ্যায় পাঠিয়েছিল বাবরি ভাঙতে। পাঠিয়েছিল বলবিরের বন্ধু যোগেন্দ্র পালকেও। বলবিরের বন্ধু যোগেন্দ্র পাল, ২৫ বছর আগে যিনি বলবীরের সঙ্গেই উঠেছিলেন বাবরির মাথায়। শাবলের ঘায়ে ভেঙেছিলেন মসজিদ।

বলবির জানিয়েছিলেন, বাবরি ভেঙে পানিপথে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে তাকে ও যোগেন্দ্রকে তুমুল সংবর্ধনা জানানো হয়। তারা যে দু’টি ইট এনেছিলেন বাবরির মাথায় শাবল চালিয়ে, সেগুলি পানিপথে শিবসেনার স্থানীয় অফিসে সাজিয়ে রাখা হয়।

কিন্তু বাড়িতে ঢুকতেই রে রে করে উঠেন বলবিরের বাবা দৌলতরাম। বলবির জানিয়েছিলেন, ‘ বাবা আমাকে বললেন, হয় তুমি এই বাড়িতে থাকবে, না হলে আমি। তো আমিই বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে। আমার স্ত্রীও বেরিয়ে এল না থেকে গেল বাড়িতেই।’

ওই সময় ভবঘুরের মতো জীবন কাটিয়েছিলেন বলবির। বেশ কিছু দিন পর বাড়িতে ফিরে জানতে পেরেছিলেন, বাবা মারা গেছেন। তিনি বাবরি ভাঙায় যে দুঃখ পেয়েছিলেন বাবা, তাতেই তার মৃত্যু হয়।

এরপর পুরনো বন্ধু যোগেন্দ্রের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে আরও মুষড়ে পড়েছিলেন বলবির। জানতে পারেন, যোগেন্দ্র মুসলিম হয়ে গেছেন। যোগেন্দ্র নাকি তখন বলবিরকে বলেছিলেন, বাবরি ভাঙার পর থেকেই তার মাথা বিগড়ে গিয়েছিল। যোগেন্দ্রর মনে হয়েছিল পাপ করেছিলেন বলেই সেটা হয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে তাই মুসলিম হয়ে যান যোগেন্দ্র।

এর পরেই আর দেরি না করে সোনেপতে গিয়ে মাওলানা কালিম সিদ্দিকির কাছে মুসলিম ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন বলবির এবং হয়ে যান মোহাম্মদ আমির।

‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে ‘কম করে ভেঙে পড়া শ’খানেক মসজিদকে মেরামত করতে চেয়েছিলেন বলবির সিং।’ কিন্তু বলবির সিং উরফে মোহাম্মদ আমিরের আর মসজিদ সংষ্কার করা হয়ে উঠেছিল কিনা তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কিছু ব্যক্তি জানান, হত্যা করা হয়েছিল বলবিরকে। বলবির ধর্ম ত্যাগ করায় ক্ষুব্ধ করেছিল স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলবির সিং উরফে মোহাম্মদ আমিরের জন্য।

সূত্রঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা

এম.কে
২৪ জানুয়ারি ২০২৪

আরো পড়ুন

যে কারণে রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাননি তিন খান

রামমন্দির উদ্বোধনের পর ভারতে ধ্বংস করা হচ্ছে মুসলমানদের দোকানপাট

ভারতের নাগরিকত্ব চাওয়াদের ‘খতনা’ পরীক্ষা করা উচিতঃ বিজেপি নেতা