TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

রাশিয়ায় চাকরির প্রলোভনে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের

রাশিয়ায় বৈধভাবে চাকরির উদ্দেশ্যে যাওয়া অন্তত ১০ জন বাংলাদেশি এখন বাধ্য হচ্ছেন ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে। পরিবারের আর্তনাদ আর আশঙ্কার মধ্যেই তারা ফিরতে পারছেন না। এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সর্বশেষ প্রতিবেদনে, যার শিরোনাম— ‘Promises Written in Blood: How Legal Migration Turned into Forced Recruitment in the Russia-Ukraine War’।
গত ৩ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিখোঁজ বা আটকে পড়া বাংলাদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো বা নিহতদের সঠিক পরিসংখ্যান এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

ব্র্যাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দালালচক্রের সদস্যরা উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এসব শ্রমিককে রাশিয়ায় পাঠায়। কেউ কেউ তেল, নির্মাণ বা পরিবহন খাতে কাজের আশায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়।

সংস্থার সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, অন্তত ১০টি পরিবার তাদের প্রিয়জনকে দেশে ফেরানোর আবেদন করেছে। তারা বৈধ ভিসায় রাশিয়া গিয়েছিলেন, কিন্তু প্রতারণার শিকার হয়ে এখন যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দি অবস্থায় আছেন। এসব শ্রমিকের বেশিরভাগই ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে রাশিয়া গিয়েছিলেন, আর প্রতারণার সঙ্গে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দালালচক্র উভয়ই জড়িত বলে তিনি জানান।

ব্র্যাক জানায়, তারা ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিআইডির কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আইনি ও মানসিক সহায়তা দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বাগেরহাটের অয়ন মণ্ডল ও কুমিল্লার অমিত বড়ুয়ার ঘটনাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অয়ন শেষবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছিলেন, তাকে ইউক্রেন সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অমিত বড়ুয়ার একটি ছবিতে দেখা যায়, তিনি রুশ সেনা পোশাকে রয়েছেন, এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

ময়মনসিংহের আলী হোসেন জানান, তাঁর ছেলে আফজাল হোসেন এক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় যান। পরে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় এবং মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন। পরে মস্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় তিনি দেশে ফেরেন।

অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু (Refugee and Migratory Movements Research Unit) জানিয়েছে, অনেককে সরাসরি রাশিয়া নয়, বরং সৌদি আরব হয়ে ট্যুরিস্ট বা ওমরাহ ভিসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে তাদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হয়।

রামরুর নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, রাশিয়ায় কতজন বাংলাদেশি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে, কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন—এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগেই বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে যুদ্ধের ফাঁদে পড়া কয়েকজন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে। রাশিয়ায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত একজন দালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছিল, ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়তে গিয়ে ২২ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। এরপর থেকে মস্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে অন্তত ডজনখানেক পরিবার নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে আবেদন করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় প্রতারণার মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশিকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে এবং বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সূত্রঃ ব্র‍্যাক

এম.কে

আরো পড়ুন

ভারতের হস্তক্ষেপের অবসান চেয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ৫ নাগরিকের বিবৃতি

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ ছিল দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প

মরণফাঁদে প্রাণ হারাচ্ছে সিলেটের পর্যটকরা

অনলাইন ডেস্ক