24.4 C
London
August 17, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

রাষ্ট্রপতি সরানোর গুঞ্জনঃ সংবিধান, সেনা ও রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন দ্বন্দ্ব

ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সরানোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। যদি এ গুঞ্জন সত্য হয়, তাহলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ড. ইউনুসের ঘোষিত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সময়সূচি নিছক একটি আইওয়াশ ছিল বলে ধারণা করা যায়। তবে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন কোনো সহজ প্রক্রিয়া নয়।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগপত্র কেবলমাত্র জাতীয় সংসদের স্পিকারের নিকট জমা দিতে পারেন। কিন্তু জটিলতা হচ্ছে, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেত্রী ও তৎকালীন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেন। এখানেই সামনে আসে সাংবিধানিক ধারা। সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, পদ শুন্য হলেও স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত কার্যত বহাল থাকবেন। অর্থাৎ, নতুন সংসদ না হওয়া পর্যন্ত শিরিন শারমিন কার্যত স্পিকার হিসেবেই বহাল রয়েছেন এবং রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে তার কাছেই পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।

এখানেই থেমে থাকছে না জটিলতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি যদি সত্যিই পদত্যাগ করেন, তবে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন স্পিকার শিরিন শারমিন। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আবারো সামনে চলে আসছেন তিনি। জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে শিরিন শারমিনকে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার। ফলে ইউনুস-এনসিপি যদি নিজেদের ইচ্ছামতো কাউকে রাষ্ট্রপতি বানাতে চায়, তবে ওয়াকার-ফ্যাক্টরই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রতিবন্ধকতা কাটাতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেমন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিশেষ পরামর্শ নিয়েছিল, এবারও তেমনি একটি নাটক সাজানো হতে পারে। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে একটি রিট চলমান, যেখানে স্পিকারের পরিবর্তে প্রধান বিচারপতির কাছে রাষ্ট্রপতি শপথ বা পদত্যাগ করার সুযোগ চাওয়া হয়েছে।

এদিকে রাষ্ট্রপতি ইস্যু ঘিরে আরও একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রশ্ন সামনে এসেছে। রাখাইন কোরিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর সংক্রান্ত চুক্তির বিরোধিতা করার কারণে বিএনপি এর খেসারত দিতে যাচ্ছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। ফলে বাংলাদেশ আবারও এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক টার্ময়েলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।

তাদের মতে, একদিকে দাঁড়িয়েছে ইউনুস-জামায়াত-এনসিপি গোষ্ঠী, আরেকদিকে ওয়াকার-বিএনপি। কয়েক মাস আগেও ইউনুস জেনারেল ওয়াকারকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভূতপূর্ব একতার কারণে তিনি ব্যর্থ হন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারও যদি ড. ইউনুস অতিরিক্ত কৌশল খাটানোর চেষ্টা করেন, তবে পরিস্থিতি সেনাশাসনের দিকে গড়াতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে সেনাশাসনে ওয়াকার আর থাকবেন না, বরং এমন একটি গোষ্ঠী সক্রিয় হবে যারা সবসময় নির্বাচিত সরকারের চেয়ে দুর্বল অনির্বাচিত সরকারকে প্রাধান্য দেয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাষ্ট্রপতি পদকে ঘিরে এমন সাংবিধানিক জটিলতা এবং ক্ষমতার পাল্টাপাল্টি সমীকরণ দেশকে নতুন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া

এম.কে
১৭ আগস্ট ২০২৫

আরো পড়ুন

পাচারের টাকায় যুক্তরাজ্যে সম্পদের পাহাড় শেখ পরিবার ও দোসরদের

সাইদা মুনা সহ ১০ দূতাবাসের ৩৮ কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসা

গুজব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উপদেষ্টা সংকটঃ নতুন মোড় বাংলাদেশের রাজনীতিতে