10.2 C
London
March 3, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

রিফর্ম ইউকের ভবিষ্যৎ টার্গেট আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় বসা

যুক্তরাজ্যের রিফর্ম ইউকে সুনির্দিষ্ট ভোটের ফলাফলের জন্য পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে নাইজেল ফারাজকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করা সম্ভব হয়।

রিফর্ম ইউকে-এর চেয়ারম্যান জিয়া ইউসুফ ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি আত্মবিশ্বাসী যে আগামী নির্বাচনে কনজারভেটিভরা জিততে পারবে না এবং লেবার পার্টি আগামী নির্বাচনের আগে ছোট নৌকায় করে অভিবাসন বন্ধ করতে পারবে না।

রিফর্ম ইউ এখন সেই ভোট শেয়ারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে যা নাইজেল ফারাজকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রয়োজন, এমনটাই দাবি করছেন দলের শীর্ষ কৌশলবিদদের একজন। মিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা জিয়া ইউসুফের মতে, মাত্র ৩১% ভোট পেলেই রিফর্ম ইউকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে – আর পলিটীকো-এর সাম্প্রতিক ভোট বিশ্লেষণে দলটি এখন ২৭% ভোট শেয়ার নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।

জিয়া ইউসুফ বলছেন, যদি দলটি ৩৫% বা তার বেশি ভোট পায়, তাহলে ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৩৫০ থেকে ৪০০টি আসন জয় করতে পারবে। গত গ্রীষ্মের নির্বাচনে স্যার কিয়ার স্টারমারের দল ৩৪% ভোট পেয়ে ৪১২টি আসন জিতেছিল।

জিয়া নিশ্চিত যে আগামী নির্বাচনের আগে লেবার সরকার যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় অভিবাসন বন্ধ করতে পারবে না।

জিয়া বলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এটি খুবই দ্রুত ও সহজে সমাধানযোগ্য একটি সমস্যা। এর জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত হলো ইউরোপীয় কনভেনশন অফ হিউম্যান রাইটস (ECHR) থেকে বেরিয়ে আসা – যা লেবার পার্টি কখনোই করবে না।

আপনাকে ঘোষণা করতে হবে যে যারা অবৈধভাবে এখানে আসবে তারা কখনোই থাকার অনুমতি পাবে না। আপনাকে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে, যাতে এই প্রবণতা বন্ধ হয়।

এছাড়া, অবশ্যই করদাতাদের টাকায় বিনামূল্যে আবাসন সুবিধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। লেবার পার্টি এগুলোর কোনোটিই বন্ধ করবে না।”

৩৮ বছর বয়সী এই মিলিয়নিয়ার একজন উদ্যোক্তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেন, তিনি মনে করেন ব্রিটেনকে “পুনরুজ্জীবিত করা” সম্ভব যাতে এটি আবার বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হয়ে ওঠে।

জিয়া ইউসুফের বাবা-মা ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কা থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন এবং এন,এইচ,এসে-এ কাজ নেন – তার বাবা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মা নার্স ছিলেন। স্কটল্যান্ডের নর্থ ল্যানার্কশায়ারের বেলশিলে জন্মগ্রহণকারী জিয়া লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকসে পড়ার সুযোগ পান এবং গোল্ডম্যান স্যাক্স-এ কাজ করার পর বিলাসবহুল কনসিয়ার্জ সেবা সংস্থা ‘ভেলোসিটি ব্ল্যাক’ প্রতিষ্ঠা করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন।

এটি অভিবাসনের একটি সফল গল্প – আর এখন তিনি সেই দেশকে রক্ষা করতে চান যাকে তিনি ভালোবাসেন।

রিফর্ম ইউকে-এর নতুন কার্যালয়ে, মিলব্যাংক টাওয়ারে বসে তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি এই স্টার্ট-আপ পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। এই একই ভবন থেকে ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে নিউ লেবার-এর বিজয় পরিকল্পনা করেছিলেন আলাস্টার ক্যাম্পবেল।

তিনি বলেন, ” এই দেশ আমার এবং আমার পরিবারের প্রতি অবিশ্বাস্যভাবে সদয় ছিল। তাই আমি এটি পুরোপুরি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এবং আমার সমস্ত সময় দিয়ে দেশ পুনর্গঠনে পরিকল্পনা করছি।”

রিফর্ম ইউ-এর বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনগণকে বোঝানো যে দলটি সত্যিই জিততে পারে। জিয়া দাবি করেন, দেশের জনগণ “দুই পুরনো দল” নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, জনগণ করের ভারে জর্জরিত, অথচ পাবলিক সার্ভিস দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

তিনি মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে লেবার পার্টির রিফর্ম ইউকে-এর বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রমাণ করে স্যার কিয়ার স্টারমার এই দলকে “প্রকৃত বিরোধী দল” হিসাবে দেখছেন।

“আপনি তার চোখে আতঙ্ক দেখতে পাবেন,” তিনি বলেন। “তিনি আতঙ্কিত – এবং সেটাই স্বাভাবিক, কারণ রিফর্ম ইউকে এই ব্যর্থ সরকারকে এক্সপোজ করছে, এবং আমরা থামবো না; আমরা চালিয়ে যাব।”

রিফর্ম ইউকে-এর সদস্য সংখ্যা এখন ২,১৮,০০০-এর বেশি, এবং জিয়া বলেন, পার্টির সভাগুলোতে “অতুলনীয় ইতিবাচক, উদ্দীপনামূলক পরিবেশ থাকে – যা একটি রাজনৈতিক সমাবেশের চেয়ে রক কনসার্টের মতো মনে হয়।”

যদি রিফর্ম ইউকে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারে, তাহলে দলটিকে আরও কঠোর তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানো।

“মানুষ সব সময় এই দলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে,” তিনি স্বীকার করেন।

আগামী মে মাসে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এবং তিনি বলেন, এত বেশি মানুষ অন্য দল থেকে রিফর্ম ইউকেতে- যোগ দিতে চাচ্ছে যে এরজন্য একটি “বিশেষ পরিচালনা টিম” গঠন করা হয়েছে।

“আমরা আমাদের পার্টির সংস্কৃতি নিয়ে খুবই যত্নশীল। আমরা জানি আমরা কী বিশ্বাস করি এবং রিফর্ম ইউকের- মূল আদর্শ কী।

“যদি কেউ আমাদের মূল্যবোধ শেয়ার করে এবং সঠিক মানসিকতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে যোগ দিতে চায়, তাহলে তাদেরকে স্বাগত জানাবে দল।”

নাইজেল ফারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যিনি আধুনিক রাজনীতির অন্যতম বিতর্কিত ব্যক্তি। তবে জিয়া মনে করেন না যে এই সম্পর্ক রিফর্ম ইউকে-এর জন্য কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বরং তিনি বলেন, ” অত্যন্ত ক্ষমতাশালী বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা যুক্তরাজ্যের জন্য একটি সুবিধা। নাইজেল স্পষ্ট বলেছেন, তিনি ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে চান, যেমন ট্রাম্প সবসময় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নিয়ে কথা বলেন।

“এখন সময় এসেছে আমাদেরও বলতে হবে যে প্রতিটি নীতিগত সিদ্ধান্তে ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে – তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হোক বা দেশীয় নীতি।”

জিয়া নিজেকে একজন “ব্রিটিশ মুসলিম দেশপ্রেমিক” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার দল এমন সকলের জন্য উন্মুক্ত যারা এর মূল্যবোধকে সমর্থন করে।

“আমাদের ব্রিটিশ জনগণকে স্পষ্ট জানাতে হবে আমরা কী নিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমরা পরিবার, সম্প্রদায় এবং দেশকে গুরুত্ব দিই। যদি আপনি এই মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনার পটভূমি বা গল্প যাই হোক না কেন, আপনি এখানে স্বাগত।”

আজ ইউরোপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা লন্ডনে ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হবেন। জিয়া জোর দিয়ে বলেন, রিফর্ম ইউকে রাশিয়ার প্রতি দুর্বল নয় এবং যুক্তরাজ্যকে আবার “একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি” হিসেবে দেখতে চান তারা।

“নাইজেল খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন একজন দুষ্ট স্বৈরশাসক এবং তাকে থামাতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের সামরিক বাহিনীতে বহু বছর ধরে বিনিয়োগের অভাব রয়েছে।”

তিনি যুক্তরাজ্যের সামরিক ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য ব্যয় সংকোচনের আহ্বান জানান।

সূত্রঃ এক্সপ্রেস ডট ইউকে

এম.কে
০৩ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

রমজান উপলক্ষে বার্মিংহামে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

যুক্তরাজ্যে ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণার রেকর্ডসংখ্যক অভিযোগ

যুক্তরাজ্যে ৫ থেকে ৭ বছর বয়সীদের এক চতুর্থাংশের হাতে স্মার্টফোনঃ গবেষণা