ঝড় ক্লডিয়ার ধ্বংসযজ্ঞের পর যুক্তরাজ্যে আর্কটিক শীতের হাওয়া ঢুকে পড়ায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে গেছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসজুড়ে এখনো সক্রিয় রয়েছে বহু বন্যা সতর্কতা, আর দেশজুড়ে তুষারপাত ও বরফের আশঙ্কা বাড়ছে।
ওয়েলসের মনমাউথে শনিবার বড় ধরনের জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা হলেও রবিবার দুপুরে তা প্রত্যাহার করা হয়। শুক্রবারের প্রবল বর্ষণে ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় বহু মানুষকে উদ্ধার করতে হয়েছিল। ন্যাচারাল রিসোর্সেস ওয়েলস (NRW) জানায়, মনমাউ নদীর পানি রেকর্ড সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রম করেছে—এটি স্টর্ম ডেনিস (২০২০) ও স্টর্ম বার্ট (২০২৩)-এর রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
রবিবার পর্যন্ত ওয়েলসে জীবনহানির আশঙ্কায় চারটি গুরুতর বন্যা সতর্কতা বহাল ছিল। ইংল্যান্ডে সক্রিয় ছিল আরও ৪১টি সতর্কতা। ওয়েলস সরকার জানিয়েছে, ঘরবাড়ি, ব্যবসা, রাস্তা, রেল এবং জ্বালানি–সংক্রান্ত অবকাঠামো—সবই “গুরুতর বন্যা”য় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইংল্যান্ডের পরিবেশ সংস্থা জানায়, ঝড় ক্লডিয়ায় অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি ডুবে গেছে, যার বড় একটি অংশ কামব্রিয়া অঞ্চলে। ঝড়ের প্রভাব কমলেও আবহাওয়া এখন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে—তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কিছু এলাকায় তুষার ও বরফ জমতে পারে।
শনিবার রাত ছিল গত ২০ মার্চের পর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ঠান্ডা রাত। স্কটল্যান্ডের তুললক ব্রিজে তাপমাত্রা নেমে যায় -৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। নভেম্বরে অস্বাভাবিক উষ্ণ আবহাওয়ার পর পুরো দেশে তাপমাত্রা প্রায় ৫ ডিগ্রি কমে গিয়ে অনেক এলাকায় এক অঙ্কে নেমে এসেছে।
মেট অফিসের ডেপুটি চিফ মেটিওরোলজিস্ট ড্যান হোলি জানান, ঝড় দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ায় আর্কটিক অঞ্চল থেকে তীব্র ঠান্ডা উত্তরী বাতাস যুক্তরাজ্যে ধেয়ে আসছে। এতে হঠাৎই শীতের তীব্রতা বাড়বে এবং ব্যাপক তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও তাপমাত্রা -৭ ডিগ্রিতে নামতে পারে, আর দিনের বেলাতেও এক অঙ্কের মধ্যে থাকবে।
হাওয়া আরও শীতল অনুভূত হবে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, “স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ সময় উষ্ণ আবহাওয়ার পর এ পরিবর্তন হবে বড় ধাক্কার মতো।” আগামী সপ্তাহজুড়েই আবহাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে।
যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি সোমবার থেকে মিডল্যান্ডস, উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম ও ইয়র্কশায়ার অ্যান্ড দ্য হাম্বার এলাকায় ঠান্ডা আবহাওয়ার সতর্কতা জারি করেছে—এটি কার্যকর থাকবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। মঙ্গলবার থেকে উত্তরাঞ্চলের উঁচু এলাকায় তুষারপাত শুরু হতে পারে।
ওয়েলস ও ইংল্যান্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দমকল বাহিনী “চরম চাপের” মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার ব্রিগেডস ইউনিয়ন (FBU)। সংস্থার মহাসচিব স্টিভ রাইট বলেন, কাটছাঁটের কারণে অগ্নিনির্বাপকদের জনবল ও সরঞ্জাম কমে যাওয়ায় বড় আবহাওয়াজনিত দুর্যোগে তাদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, “দমকলকর্মীরা সারারাত কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতি কাজকে আরও কঠিন করে তুলছে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

