13 C
London
March 9, 2025
TV3 BANGLA
ফিচার

রোজা নিয়ে প্রচলিত যেসব ভুল ধারণা

শুরু হয়েছে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম রোজা। ইমান, নামাজ ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। আরবি ভাষায় রোজাকে সাওম বলা হয়, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা।

আপাতদৃষ্টিতে রোজা সহজ এবং সাধারণ একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয় হলেও এটি নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত, যেগুলো নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এরকম কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা সম্প্রতি কথা বলেছে যুক্তরাজ্যের অ্যাডভান্সড ইসলামি বিজ্ঞান এবং শারিয়া আইনের ছাত্র শাব্বির হাসানের সঙ্গে। নিচে সে বিষয়ে তুলে ধরা হলো:

দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়ঃ

অনেকের ধারণা, পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদদের ভাষ্যমতে, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। এ বিষয়ে শাব্বির হাসান বলেন, “অনেক মানুষ অতি সাবধানী।”

এমন মানুষদের জন্য পরামর্শ দিয়ে শাব্বির হাসান বলেন, “সবচেয়ে ভালো হয় অল্প পরিমাণ পেস্ট নিন। মিন্টের গন্ধ কম, এরকম পেস্ট ব্যবহার করুন।” ভয় পেলে, গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে নাঃ
অনেক মানুষ মনে করেন, মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা ভঙ্গ হয়। তবে শাব্বির হাসান সবাইকে আশ্বস্ত করে জানান, মুখের লালা পেটে ঢুকলে কোনো অসুবিধা নেই।

শাব্বির হাসান বলেন, “মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এ বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই, নিজের লালা গলাধঃকরণ করা খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙে না।”

তবে অন্যের মুখের লালা নিজের মুখে ঢুকলে রোজা থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোজা পালনের সময় আপনি আপনার সঙ্গীকে চুম্বন করতে পারবেন না, অন্তরঙ্গ হওয়া যাবেনা। মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে সংযত করা। সে কারণেই খাবার, পানীয় বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে।”

শুধু খাবার অথবা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবেঃ

শুধুমাত্র খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙে যাবে বলে অনেকে মনে করেন। তবে আরও কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শাব্বির হাসান বলেন, “কিছু অপরাধ জিহ্বা দিয়ে হয়…আপনি যদি দুর্নাম রটান, গুজবে অংশ নেন বা কাউকে গালিগালাজ করেন, তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে।”

অসাবধানতাবশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়ঃ

কেউ যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলে তিনি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে দেন, তাহলেও তার রোজা বৈধ থাকবে। কিন্তু নামাজের আগে ওজুর সময় যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি খেয়ে ফেলেন, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ এ ভুল এড়ানো সম্ভব।

শাব্বির হাসান বলেন, “রোজা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনার কারণে রোজা রেখে ওজু করার সময় গারগল না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।”

ওষুধ সেবন করা যাবে নাঃ

আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সঙ্গে দেওয়া যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) বলেছে, রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে।

চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না। তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ। সেহরির আগে এবং ইফতারের পর তা খেতে হবে।

শাব্বির হাসান বলেন, “প্রথম কথা আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কি-না? কোরআনে পরিস্কার বলা আছে, আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।”

যেকোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবেঃ

ইসলামে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ ব্যক্তির ওপর রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে। এমসিবি জানায়, শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক না।

শাব্বির হাসান বলেন, “যদি কেউ অল্প সময়ের জন্য অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙা রোজাগুলো পূরণ (কাযা) করে নিতে পারেন।”

তিনি আরও বলেন, “যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতা থাকে এবং রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে রোজার মাসের প্রতিদিন সদকায়ে ফিতর পরিমাণ দান করে ফিদিয়া আদায় করতে হবে।”

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

এম.কে
০৮ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

 যে ধরনের প্রপার্টিতে মর্গেজ পাওয়া কঠিন

অনলাইন ডেস্ক

করোনায় মৃত্যুর অন্যতম কারণ সেপসিস

বিশ্বে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত