এআই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে পৃথিবীর বদল আসন্ন। তবে এআই প্রযুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোবট বিপ্লব শুরু হয়েছে অনেক আগেই মানবহত্যার সূত্রপাত তখন থেকেই। তারা উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন ১৯৭৯ সালের ২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড মোটর কোম্পানির কারখানায় একটি রোবটের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। গুদাম থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ বয়ে আনার কাজ করতো রোবটটি। কারখানার মানব কর্মীরা মনে করেন, ত্রুটির কারণে রোবটটি যথেষ্ট দ্রুত কাজ করছে না। কাজে গতি আনতে ২৫ বছরের এক কর্মী রবার্ট উইলিয়ামসকে গুদামের তাকের ওপর উঠে যন্ত্রাংশ আনতে বলেন তার সহকর্মীরা। উইলিয়ামস তাকের ওপর উঠতেই তার মাথায় এক টন ওজনের রোবটটির একটি বাহু আঘাত করে। আঘাতে চূর্ণ হয় তার খুলি, মারা যান সঙ্গে সঙ্গে।
১৯৮১ সালে জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় প্রায় একইভাবে মারা যান কেনজি উরাদা নামের আরেক কর্মী। তিনি যখন যান্ত্রিক ত্রুটি কবলিত একটি রোবট পরীক্ষা করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই সেটি চলতে শুরু করে, আর তার সামনে পড়ে নিহত হন উরাদা।
নিজ বই ‘হোয়েন রোবটস কিল: আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আন্ডার ক্রিমিনাল ল’-তে এমন বর্ণনাই দিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল হ্যালেভি। তার বর্ণনা অনুযায়ী, ‘সামনে থাকা হুমকি অপসারণে, মানবকর্মীকে পাশের একটি মেশিনের মধ্যে ঠেলে দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর উপায়- এমন সিদ্ধান্ত নেয় রোবটটি।’
তথ্যানুযায়ী ১৯৯২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই কর্মস্থলে রোবটের হাতে মারা পড়েছেন ৪১ জন। তবে এটা নথিভুক্ত সংখ্যা, প্রকৃতপক্ষে তা বেশিই হবে।
২০০৭ সালে রোবটিক একটি বিমান-বিধ্বংসী কামান দক্ষিণ আফ্রিকার ৯ সেনাকে হত্যা করে। সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণে কামানের মুখ এলোমেলোভাবে ঘুরতে ঘুরতে গোলাবর্ষণ করে, পুরো ঘটনাটি ঘটে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, আরো উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশ– যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি হওয়ার এই হুমকিকে কেবল বাড়িয়েই তুলেছে। দেশে দেশে এই হুমকি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় এরমধ্যেই চলছে ‘চালকহীন’ গাড়ি; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করছেন রোবট কুকুর। আবার কম্পিউটার-চালিত ব্যবস্থাগুলোকে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে – ফলে তারা ভার্চুয়াল জগতের বাইরের বাস্তব জগতকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করার শক্তি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কীভাবে রোবট ব্যবহৃত হবে–তার জন্য থাকা চাই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। আইনের বাঁধা না থাকলে- রোবটের বাণিজ্যিক ব্যবহার মঙ্গলময় হবে না। মনে রাখা দরকার, সব ধরনের সতর্কতার পরেও দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।
উল্লেখ্য যে, এআই ও রোবটিক্স কোম্পানিগুলো চায় না আইনের বাঁধা আসুক। চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক সংস্থা- ওপেনএআই প্রকাশ্যেই এ শিল্পের সুরক্ষা বিধিমালা শিথিল করার চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা চ্যাটজিপিটিকে ‘উচ্চ ঝুঁকি’র শ্রেণিতে রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা না করতে ইইউ’তে তদ্বির করে কোম্পানিটি। ওপেনএআই এ প্রচেষ্টা না চালালে– ইইউ আরও কঠোর শর্ত দিত, যার আলোকে নিশ্চিত হতো স্বচ্ছতা ও মানব নজরদারি।
এম.কে
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩