সম্প্রতি শেঙ্গেন অঞ্চলের বাইরে থাকা ইউরোপের বেশ কিছু দেশে কয়েক বছর ধরে কাজের ভিসায় বাংলাদেশিদের আসতে দেখা যাচ্ছে৷ সেসব দেশের মধ্যে অন্যতম রোমানিয়া৷ বিগত দুই বছরে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যাঘাত ঘটলেও এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশিদের ৪৭১ টি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে৷ যেটি ২০২০ সালে ছিল ৩৬৫৷ (তথ্য সূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্ট)
সুযোগ
প্রতিবছর রোমানিয়ায় প্রচুর দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন পড়ে, তারা বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া থেকে অনেক লোক আনে। আর বর্তমানে ইউরোপের প্রায় সব দেশেই ভিসা দেওয়া বন্ধ, একমাত্র রোমানিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হচ্ছে।
রোমানিয়ায় বর্তমানে ওয়ার্ক পারমিটে যে ভিসাগুলি হচ্ছে সেগুলি গার্মেন্টস, এগ্রিকালচার এবং বিল্ডিং কন্ট্রাক্টশনের কাজে। বাংলাদেশ থেকে আসার সময় অবশ্যই কিছুটা হলেও এসব কাজের উপর দক্ষতা থাকতে হবে। তা না হলে এখানে এসে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, মালিকপক্ষ কাজে নিতে চায়না। কাজ না জানলে মালিকপক্ষ খারাপ আচরণ করে কেননা তারা আপনাকে এনেছে স্কিল ওয়ার্কার হিসেবে। তাই কাজ জানাটা খুব জরুরি।
জানা গেছে, বাংলাদেশের অনেকে রোমানিয়ার বিভিন্ন কারাখানাতে শ্রমিক হিসেবে এবং কাঠমিস্ত্রী হিসেবেও কর্মরত আছেন। এছাড়া এখনও পর্যন্ত মোটাদাগে নির্মাণখাতে ব্যাপকভাবে শ্রমিকের চাহিদা আছে৷ বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মালিক ও কোম্পানির সাথে ভালো যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদেরও রোমানিয়ায় ওয়ার্ক পারমিটে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সেখানে বসবাসরত প্রবাসীরা।
সম্ভাবনা
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো রোমানিয়ায় জীবনযাত্রার মান তেমন ব্যয়বহুল নয়৷ সেখানে বসবাসরত এক বাংলাদেশি জানান, মাসে ৫০০ ইউরো (প্রায় ৫০ হাজার টাকা) বেতন তার। থাকা-খাওয়া মালিক প্রদান করেন। মাসে হাত খরচ বাবদ তার সর্বোচ্চ খরচ হয় ৫০ ইউরো।
তিনি আরও জানান, দিল্লি রোমানিয়া এম্বাসি থেকে এক বছরের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিয়ে এসেছেন তিনি৷ আইন অনুযায়ী এখানে প্রতি বছর ভিসা রিনিউ করতে হয়, যেটি তেমন ঝামেলার নয়৷ প্রথম কয়েক বছর টানা থাকার পরে ক্রমান্বয়ে দুই এবং পাঁচ বছরের টিআর বা অস্থায়ী থাকার অনুমতিপত্র দেওয়া হয়৷
২,৩৮,৩৯৭ বর্গমাইলের দেশটিতে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। এটি ২০০৭ সালে ইউরোপ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
রোমানিয়ার আয়তন প্রায় বাংলাদেশের দেড়গুণ বড়। রোমানিয়ার টাকার নাম হচ্ছে লিউ। এক লিউতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫ টাকার কাছাকাছি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে কম শিক্ষার হারের মধ্যে রয়েছে রোমানিয়ায় (উচ্চশিক্ষার হার ৪০% এর নিচে)। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে যেভাবে সাধারণ জনগণের জন্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে রোমানিয়ায় সেভাবে কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। রোমানিয়ার ৬০ ভাগ মানুষ দিনে এনে দিনে খায়। রোমানিয়া ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো থেকে পিছিয়ে থাকার অনেক কারণও আছে, রোমানিয়ার যে স্থানীয় মানুষ আছে তাদের ৬০ ভাগ অরিজিনাল রোমানিয়ার লোক নয়।
সতর্কতা
রোমানিয়ার ভিসা নিয়ে ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রবাসীদের মধ্যে বেশ কিছু প্রচারণাও দেখা যাচ্ছে ইদানীং। একইসঙ্গে মিলছে রোমানিয়ার ভিসা দেওয়ার প্রলোভন দেখানো মুনাফালোভী এজেন্সিগুলোর প্রতারণার খবর।
জানা যায়, বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন ভিসা এজেন্সি গড়ে উঠেছে। বেশিরভাগ এজেন্সিগুলি নামেমাত্র, এদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র একটা ফেইসবুক পেইজ আর গ্রুপেই সীমাবদ্ধ। আবার অনেকেই অফিস একটা নিলেও এগুলির কোন ব্যবসার লাইসেন্স বা সরকারিভাবে রিক্রুটিং ব্যবসার অনুমতি নেই। বিভিন্ন নাম দিয়ে সাইনবোর্ড একটা লাগিয়ে বসে আছে তারা। ফেইসবুকে বিভিন্ন নামে এজেন্সির প্রচারণা চালালেও বাস্তবে এসব দালালদের ইউরোপ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু নিজেদের অনেক বড় মাপের দালাল বলে প্রচার চালায়।
রোমানিয়া থেকে মাহাফুজুল হক চৌধুরী যুগান্তরের একটি প্রবন্ধে লিখেছেন,
“আমার পরিচিত অনেকজনকে দেখেছি তারা নিজেরাই ক্রোয়েশিয়া রোমানিয়া যেতে চেয়েও ভিসা পায়নি পরে তারাই লোক পাঠানোর নামে দালালি শুরু করেছে। কোনো একটা এজেন্সির সঙ্গে পরিচয় থাকলে সেও দালাল!
ফেইসবুকে তথাকথিত এসব দালালরা কেউ সরাসরি রোমানিয়ার কাজ করেনা তারা ফাইলগুলি নিয়ে দেয় অন্য একজনকে, আবার সে দেয় আরেকজনকে এভাবে মুল জায়গায় যেতে যেতে ৪-৫ জন দালাল পরিবর্তন হয়। ফেইসবুকের এসব এজেন্সিগুলি নিজেরাও জানেনা তাদের ফাইলটা কার মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। কিন্তু তারা মানুষকে কোনোভাবেই সেটা বুঝতে দিচ্ছেনা।
কোনো কোনো দালাল অন্যজনের ভিসা নিয়ে ফেইসবুকে নিজে করেছে বলে পোস্ট দিয়ে মানুষকে দেখাচ্ছে, বিভিন্ন জনের নামে ফেইক বানানো ভিসা ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে মানুষের কাছে বিশ্বস্ত হবার চেষ্টা করছে। তারা মানুষের থেকে টাকা এডভান্স নিয়ে আবার সে টাকা ফেরত দেবার নাটকও বানিয়ে ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করছে।
তারা প্রতিদিন ডজন ডজন পারমিট হাতে পায় ফেইসবুকে এমন পোষ্ট দিলেও এসব মিথ্যা।”
৩১ অক্টোবর ২০২১
এনএইচ