গত চার বছরে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কার ওয়াশ ব্যবসায় অবৈধ অভিবাসী নিয়োগের অভিযোগে মোট ১২ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি এখনও পরিশোধ করা হয়নি।
কার ওয়াশ ব্যবসায় আধুনিক দাসত্বের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে পাচারকৃত শ্রমিকদের দিয়ে অমানবিকভাবে কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত অনেক মালিক জরিমানা পাওয়ার পরই ব্যবসা বন্ধ করে বা অন্যের নামে চালু করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে যেখানে মাত্র ১৮টি কার ওয়াশ প্রতিষ্ঠান জরিমানা দেয়নি, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৮টিতে। এর ফলে জরিমানার মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭.৯ মিলিয়ন পাউন্ড।
সান্ডারল্যান্ডের গ্রিনডনে অবস্থিত শ্যাম কার ওয়াশ গত বছর এক ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার দায়ে ৪৫ হাজার পাউন্ড জরিমানার শিকার হয়। পরিদর্শনে দেখা যায়, বর্তমানে ব্যবসাটি অন্য মালিকের নামে পরিচালিত হচ্ছে, এবং নতুন কর্মীরা পূর্বের ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না।
কোভেন্ট্রির আরেকটি প্রতিষ্ঠান কার ক্লিন সেন্টার হ্যান্ড ওয়াশের মালিক মোহসিন আজিজ আবুলকারিম ১ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড জরিমানা পেয়েছিলেন। বর্তমানে ওই ঠিকানায় নতুন নামে “ডক্টর ক্লিন কার ওয়াশ” নামে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।
এই সকল প্রতিস্থানের বর্তমান পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগের কোনো অভিযোগ না থাকলেও অতীতের অনিয়ম ও মালিকানা বদলের ধরণে সরকারের উদ্বেগ বেড়েছে।
নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড্যান জারভিস বলেন, “আমরা সরকারে আসার পর অবৈধ শ্রমের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। গ্রেপ্তার ৫১ শতাংশ ও অভিযান ৪৮ শতাংশ বেড়েছে।”
টোরি দলের সাংসদ নীল ও’ব্রায়েন বলেন, এই ঘটনা বরফচূড়ার সামান্য অংশ মাত্র। তিনি বলেন, “অনেক প্রতিষ্ঠানই অবৈধ ও শোষিত শ্রমিকের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা চালাচ্ছে। এই সমস্যার মূলে আঘাত না করলে পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
কার ওয়াশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান আলেক্সান্ডার রাসেল বলেন, “যখনই প্রতিষ্ঠানগুলোর জরিমানা হয়, তারা কোম্পানি বন্ধ করে আবার নতুন নামে ব্যবসা শুরু করে। ফলে জরিমানার অর্থ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক শ্রমিক কোনো রকম সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই গাড়ি পরিষ্কার করেন, যার ফলে তারা ত্বকের জটিল রোগে আক্রান্ত হন।”
সাম্প্রতিক এক মামলায় সাফোকের ব্যারি সেন্ট এডমন্ডসে ফাইভওয়েজ কার ওয়াশের মালিক ভিতোরিও দ্রাগোতি অবৈধভাবে চারজন রোমানিয়ান শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড জরিমানা পান এবং ২০৩২ সাল পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনার নিষেধাজ্ঞা পান।
দক্ষিণ ওয়েলসের কেফিলিতে একটি কার ওয়াশ থেকে পরিচালিত পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইরাক ও ইরান থেকে আগত দুই ব্যক্তি, যারা অবৈধ অভিবাসী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
হোমসচিব ইভেট কুপার ঘোষণা করেছেন, অবৈধ শ্রমিক নিয়োগে অভিযানে আরও গতি আনা হবে এবং শীঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
২৯ জুন ২০২৫