যুক্তরাজ্যের জন উইক নামের একজন আইটি কর্মী সে দেশের বিভিন্ন ট্রেন স্টেশনের ওয়াইফাই হ্যাক করে সন্ত্রাসী হামলা এবং ইসলাম “ইউরোপ দখল করছে” এমন বার্তা ছড়িয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়।
জন উইক স্বীকার করেছেন তিনি লন্ডনের ইস্টন, ভিক্টোরিয়া, কিংসক্রস এবং লন্ডন ব্রিজসহ বড় বড় রেলস্টেশনগুলোর ওয়াইফাই হ্যাক করেছিলেন। তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে এখন কারাদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন।
৩৬ বছর বয়সী জন আন্দ্রেয়াস উইক ওয়াইফাই সিস্টেম হ্যাক করে এমনভাবে সাজান, যাতে মানুষ অনলাইনে গেলে ম্যানচেস্টার এরিনা বোমা হামলা, লন্ডন ব্রিজ আক্রমণ, প্যারিস ও স্টকহোমের হামলা সম্পর্কে বার্তা দেখতে পেত।
ওয়েবপেজটির শিরোনাম ছিল: “আমরা তোমাকে ভালোবাসি, ইউরোপ। ইউরোপের ইসলামিকরণ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে এবং প্রতিদিন এটা আরও খারাপ হচ্ছে।”
ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বলা হয়, উইক তার কর্মস্থল গ্লোবাল রিচ-এর মাধ্যমে ওয়াইফাই ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে ওয়াইফাই সেবা দেওয়া সংস্থাগুলোর ওয়েবপেজ তৈরি ও পরিচালনা করে।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর উইকের এই হ্যাকিংয়ের ফলে লন্ডনের ১০টি ট্রেন স্টেশন — ইস্টন, ভিক্টোরিয়া, কিংস ক্রস, লন্ডন ব্রিজ, ক্যানন স্ট্রিট, চারিং ক্রস, লিভারপুল স্ট্রিট, প্যাডিংটন, ক্ল্যাফাম জাংশন এবং ওয়াটারলু — প্রভাবিত হয়।
এছাড়াও ম্যানচেস্টার পিকাডিলি, বার্মিংহাম নিউ স্ট্রিট, গ্লাসগো সেন্ট্রাল, লিডস সিটি, লিভারপুল লাইম স্ট্রিট, ব্রিস্টল টেম্পল মিডস, এডিনবরাহ ওয়েভারলি, রিডিং এবং গিল্ডফোর্ড স্টেশনেও এর প্রভাব পড়ে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জার্মানির বিভিন্ন মিউজিক ভেন্যু ও যুক্তরাজ্যের বিসেস্টার শপিং ভিলেজেও হ্যাকড পেজ প্রদর্শিত হয়েছিল, যদিও উইক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শুক্রবার আদালতে উইক ধর্মীয় ঘৃণা উস্কে দিতে চেয়ে হুমকিস্বরূপ লেখা বিতরণের অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন।
এই অপরাধের জন্য তাকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে।
প্রসিকিউটর ওয়ারেন স্ট্যানিয়ার বলেন, উইক সাধারণ ওয়াইফাই টার্মস ও কন্ডিশনের পেজ হ্যাক করে ইসলামবিরোধী বার্তা দেন।
তিনি সেই প্রাথমিক পেজটিকে বিকৃত করে একটি দীর্ঘ বার্তা এবং ছবিসহ প্রচারণা করতেন, যেটি প্রসিকিউশনের মতে ইসলামবিরোধী।
বার্তাটিতে লেখা ছিল “নিচে যা আছে তা কেবলমাত্র আসন্ন বিপদের একটি ছোট উদাহরণ” বলে, এরপর ২০১৭ সালের ম্যানচেস্টার এরিনা বোমা হামলার বিবরণ ও ২২ জন নিহতের ছবি ছিল।
উইক ৭/৭ লন্ডন বোমা হামলা, লন্ডন ব্রিজের ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হামলা এবং ২০১৫ সালের প্যারিসের বাতাক্লান থিয়েটারে শুরু হওয়া হামলার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি ‘Islamic’ শব্দটি বারবার মোটা হরফে ব্যবহার করেন, ২০১৭ সালের স্টকহোম হামলার কথাও বলেন যেখানে একটি ট্রাক ভিড়ের মধ্যে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বার্তাটি শেষ হয় “…and so much more…. In the name of Allah” দিয়ে।
প্রসিকিউটর বলেন, “এই বার্তা ইঙ্গিত করে যে ইসলাম ইউরোপ দখল করছে এবং এর ফলে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে আরও সন্ত্রাসী হামলা হবে।”
গ্লোবাল রিচ জানায়, উইক তার নিজস্ব ব্যবহারকারী পরিচয় ব্যবহার করে হ্যাক করতেন, যার ফলে তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে উইক আগেই এক সহকর্মীর সঙ্গে ওয়াইফাই সিস্টেম হাইজ্যাক করার বিষয়টি আলোচনা করেছিলেন।
গত বছরের মার্চে তিনি এক সহকর্মীকে মেসেজ করেছিলেন: “ইউরোপ ধীরে ধীরে ইসলামিক হয়ে যাচ্ছে, আমি সত্যিই তাই মনে করি। এটা আমাদের অজান্তেই চলে আসছে। উত্তর ইউরোপে এটা আরও খারাপ। ৭ অক্টোবরের পর এটা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। মুসলিম পশ্চিমকে ঘৃণা করে।”
সাইবার হামলার কয়েকদিন আগে তিনি আরেক সহকর্মীকে বলেন, “এই অ্যাক্সেস দিয়ে রাজনৈতিকভাবে কতটা ক্ষতি করা যায় কল্পনা করো। নেটওয়ার্ক রেলের প্রতিটি মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানো সম্ভব।”
আদালত জানিয়েছে, উইক একজন “মদ্যপ” এবং হামলার দিন তিনি মদ্যপান করেছিলেন।
জেলা বিচারক হিনা রাই তাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন, তবে ইনার লন্ডন ক্রাউন কোর্টে পরবর্তী শুনানির তারিখ পরবর্তীতে নির্ধারিত হবে বলে জানা গিয়েছে।
আদালত নির্দেশনা দিয়েছে উইক গ্লোবাল রিচ-এর কোনো সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না এবং যুক্তরাজ্য ত্যাগ করতে পারবেন না। সুত্র হতে জানা যায় উইক পূর্বে বেকেনহ্যামের লাইমস রোডে থাকতেন, তবে বর্তমানে গ্লুচেস্টার রোডের একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।
সূত্রঃ দ্য স্ট্যান্ডার্ড
এম.কে
১২ এপ্রিল ২০২৫