পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন, রাস্তা অবরোধ-ভাঙচুরের খবর প্রায়ই দেখা যায় গণমাধ্যমে। কিন্তু ভেতরের খবর জানা যায় কম। এমনই এক কারখানা, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড। বলা হচ্ছে, কোম্পানিটি অনিয়মের মাধ্যমে সরিয়ে নিয়েছে বড় অঙ্কের অর্থ। দেশত্যাগ করেছে মালিকপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানটির চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী প্রায় দুই মাস ধরে রাস্তায়। পাওনা আদায়ের দাবি তুলে কখনও করছেন সড়ক অবরোধ, কখনও বিজিএমইএ ভবন ঘেরাও অথবা কখনও তাদের গন্তব্য শ্রম ভবন।
তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসলেও মালিক পক্ষ হাওয়া। পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর সংকট সুরাহায় এগিয়ে আসছে না জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের কেউ। সেপ্টেম্বর মাস থেকে বন্ধ কারখানাটি। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ভাঙচুরও চালিয়েছে।
এ অবস্থায় বকেয়া পরিশোধে কাজ করছে শ্রম মন্ত্রণালয়। মামলা করেছে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর।
জানা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে অর্থ সংকটে কারখানাটি। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশ ত্যাগ করেন চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম চৌধুরী। তাতে আরও ঘনিভূত হয় সংকট। কোম্পানিটির বারিধারার অফিস এখন বন্ধ। আতঙ্কে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। টাকার জন্য অফিসে ধর্না দিচ্ছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি।
রফতানিমুখী এই প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। শুরুর দিকে ভালোই চলছিল। এটির মূল উদ্যোক্তা তাওহীদুল ইসলাম চৌধুরী। তার স্ত্রী আলোচিত সাইদা মুনা তাসনীম। যিনি লন্ডনে হাইকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ভারতীয় নাগরিক রাজিব শেঠি। চেয়ারম্যানের ছেলে আলভি আছফার চৌধুরী ছিলেন কোম্পানির পরিচালক ও সিইও। পরিচালক পদে ছিলেন চেয়ারম্যানের বোন শাহিন আক্তার চৌধুরী।
চেয়ারম্যানের দেশত্যাগের পর কোম্পানি দেখভাল করছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব শেঠি। বেতন-ভাতার বিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে বিজিএমইএ ভবনের বৈঠকে অংশ নেন তিনি। পাওনা পরিশোধের দিনও নিদিষ্ট করে দেন। কিন্তু গোপনে বাংলাদেশ ছেড়ে যান। দেশ ছেড়েছেন আলভি আছফার চৌধুরী। এদিকে, পরিচালক শাহিন আক্তার চৌধুরীসহ তিনজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানালেন, এ বিষয়ে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, ওরা দেখভাল করবে।
বিজিএমইএ প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, শিগগিরই এ নিয়ে কমিটি হবে। এরপর আমরা ডিল করবো।
পুঁজিবাজারে এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন দেখানো হয় ৪৯৪ কোটি টাকা। নিরিক্ষা প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির মূলধন দেখানো হয় ৫৪৫ কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণের অঙ্কও বেশ বড়।
জেনারেশন নেক্সেটের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে দায়ের করা মামলায় চার আসামির মধ্যে চেয়ারম্যান-এমডি ছাড়াও রয়েছেন চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মার্ক নিরঞ্জন চৌধুরী ও কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। বলা হচ্ছে, আর্থিক নানা কারসাজিতে মূল ভূমিকা পালন করেন এই দুই কর্মকর্তা।
কারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম সালাউদ্দিন বলেন, মালিক দেশের বাইরে চলে গেছেন। মালিকের পরবর্তীতে যারা আছেন, তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করছি; কীভাবে শ্রমিকরা টাকা পায় তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি।
বকেয়া পরিশোধে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। তবে কোন কৌশলে অর্থ পরিশোধ করা হবে তা এখনও ঠিক হয়নি।
এম.কে
০১ নভেম্বর ২০২৪