TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

লন্ডনে বেকারত্ব সংকট তীব্র, জাতিগত বৈষম্য আরও প্রকট

ব্রিটেনে গত এক দশকের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চসংখ্যক শিশু এমন পরিবারে বড় হচ্ছে, যেখানে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের স্থায়ী কর্মসংস্থান নেই। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস–ওএনএস) জানিয়েছে, চলতি বছরে প্রায় ১৫ লাখ ২০ হাজার শিশু বড়দিন কাটিয়েছে উপার্জনবিহীন পরিবারে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় লাখ বেশি। ১১ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ, যা ব্রিটেনের শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান সংকটকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।

 

সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেশটির কর্মসংস্থানে তীব্র জাতিগত বৈষম্যের চিত্র উঠে এসেছে। জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ হলেও জাতিগোষ্ঠীভেদে এই হার ব্যাপকভাবে ভিন্ন। শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার যেখানে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তা প্রায় দ্বিগুণ—৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যেও পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।

রাজধানী লন্ডনে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লন্ডনে বসবাসরত কর্মক্ষম পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রায় ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ বর্তমানে কর্মহীন, যা শহরের অন্য যে কোনও জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় সর্বোচ্চ। একই সময়ে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মহীনতার হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির তুলনায় অনেক কম।

ভৌগোলিক দিক থেকে লন্ডন এখন ব্রিটেনের বেকারত্ব সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে শহরটির বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিশেষ করে আতিথেয়তা (হসপিটালিটি) ও খুচরা বিক্রয় খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা রাজধানীর শ্রমবাজারকে নাজুক করে তুলেছে।

সরকারের নতুন ঘোষিত ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এবং ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর ফলে বহু প্রতিষ্ঠান নতুন নিয়োগ বন্ধ করেছে কিংবা কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। এতে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও সংকুচিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ব্রিটেনজুড়ে বর্তমানে উপার্জনহীন পরিবারের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর একটি বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা ও শারীরিক অক্ষমতা। ওএনএসের তথ্য অনুযায়ী, কর্মহীন পরিবারগুলোর প্রায় ৪০ শতাংশ সদস্য মহামারীর পর থেকে অসুস্থতার কারণে শ্রমবাজারের বাইরে চলে গেছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবণতা দেশটিকে ধীরে ধীরে এক ‘কল্যাণ ফাঁদে’ (ওয়েলফেয়ার ট্র্যাপ) ঠেলে দিচ্ছে, যেখানে কর্মক্ষম মানুষ ক্রমেই ভাতা নির্ভর হয়ে পড়ছে।

আগামী সময়ের পূর্বাভাসও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। উচ্চ সুদের হার ও ভোক্তা আস্থার দুর্বলতার কারণে ২০২৬ সালে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সময়ে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছানোর আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এম.কে

আরো পড়ুন

অবশেষে ব্রিটেনে কমছে তেল ও দুধের দাম

যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিন স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিকটবর্তী, আলোচনায় ল্যামি

সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি ব্রিটিশ জেন-জি, তবে দিতে হবে ওয়াই-ফাই, অ্যাটাচড বাথরুম