7.2 C
London
December 22, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

লালমনিরহাটে পিটিয়ে হত্যার পর আগুনে পোড়ানো নিহত ব্যক্তিটি কে ছিলেন

শহীদুন নবী জুয়েল

নিউজ ডেস্ক: লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাকে পিটিয়ে হত্যা এবং পরে তার লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা হতবাক করেছে সাধারণ মানুষকে। হাজার হাজার মানুষের এ ধরনের নৃশংসতাকে মধ্যযুগের বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

নিহত ব্যক্তির ভাই তৌহিদুন্নবী গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে তার ভাই মোটরসাইকেলে করে এক স্কুলের বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে গেলেও কখন কি উদ্দেশ্যে পাটগ্রামে গিয়েছিলেন, সেটা কেউ জানাতে পারেননি।

পরে সন্ধ্যার দিকেও তিনি বাড়িতে না ফেরায় এবং মোবাইলে কোনো সাড়া না দেয়ায় খোঁজখবর শুরু করা হয়। এসময় ওই বন্ধুর কাছে খবর নেয়া হলে তিনি পাটগ্রামের সেই সহিংস পরিস্থিতির কথা জানান।

এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া গণপিটুনির ভিডিওটি দেখে মি. তৌহিদুন্নবী নিশ্চিত হন যে হামলার শিকার ওই ব্যক্তি আর কেউ নন, তারই আপন ভাই জুয়েল।

পিটিয়ে হত্যার পর আগুনে পোড়ানো হয় জুয়েলের মরদেহ

জানা যায়, তার পুরো নাম আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন নবী জুয়েল। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ এবং তার বয়স পঞ্চাশের কিছু বেশি।

এদিকে স্বামীর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিহত শহীদুন নবী জুয়েলের স্ত্রী এবং তার দুই সন্তান। তার ছোট ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বলে জানা গেছে।

বিবিসি বাংলা সূত্রে জানা গেছে, জুয়েলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুর জেলাতেই। রংপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে ভর্তি হন। সেখানেই সম্পন্ন করেন তার অনার্স এবং মাস্টার্স।

পড়ালেখা শেষে, রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরি সায়েন্সের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তিনি মূলত সেখানকার লাইব্রেরির ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতেন। টানা ২৪ বছর সেই চাকরি করেছেন তিনি।

গত বছর অবসরে যাওয়ার পর জুয়েল নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। না হলে নতুন কোনো চাকরিতে যোগ দেয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই।

কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কোনো দিকেই কোন গতি করতে পারছিলেন না। এমন অবস্থায় জুয়েল কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান মি. তৌহিদুন্নবী। তবে তার এই মানসিক হতাশা গুরুতর কিছু ছিল না বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।

ব্যক্তিজীবনে সহজ, সরল, অমায়িক ও ধর্মভীরু মানুষ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিলেন জুয়েল। তাই তার এমন নৃশংস মৃত্যুর ঘটনা কেউই যেন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে নিহতের ভাই তৌহিদুন্নবী বলেন, জুয়েল এক কথায় সহজ আর সাদা মনের মানুষ ছিলেন। স্বভাবে ও একটু চঞ্চল। কিন্তু ইদানিং মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছিল তার। তবে সেটা গুরুতর কিছু না। এমনিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন।

ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি জুয়েল নানা ধরনের বই পড়তেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ইংরেজি ভাষায় তার ভালো দখল ছিল বলেও তিনি জানান।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
৩০ অক্টোবর ২০২০
এনএইচ

আরো পড়ুন

ভারতে পালানোর সময় ফজলে করিম চৌধুরী আটক

অবশেষে প্রার্থী হচ্ছেন আরিফুল হক

সিলেটের শাবিপ্রবি’র প্রধান ফটকে বিক্ষোভকারীরা