15.1 C
London
September 16, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

লিডিং ইউনিভার্সিটির ‘নির্যাতিত’ সেই উপাচার্যকে দায়িত্বে ফেরালেন শিক্ষার্থীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরে সারা দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা যখন পদত্যাগ করছেন সে সময় সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। প্রায় ১০ মাস ধরে কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রেখে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলাকে নিরাপদে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনেছেন শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১১ আগস্ট) লিডিং ইউনিভার্সিটিতে এ ঘটনা ঘটেছে।

‘নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার’ উপাচার্যকে দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অচলাবস্থার জন্য কোষাধ্যক্ষ বনমালীকে পদত্যাগ করার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামও দিয়েছেন তারা।

পাশাপাশি একতরফা আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেইন ও সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাশের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আইন বিভাগের প্রভাষক রেজাউল করিমকে বরখাস্ত করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেওয়ায় আবেগাপ্লুত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপাচার্য ড. আজিজুল মাওলা।

উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের হাত থেকে ১১ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে সই করে একমত পোষন করেন তিনি।

উপাচার্য ড. আজিজুল মাওলা বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে চক্রটি আমাকে পাকিস্তানি বলে অপপ্রচার করেছে। পটপরিবর্তনের পর আবার আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে আরেক অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল। এর আগে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একটানা নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকারের পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আমাকে রক্ষা করল। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

জানা গেছে, লিডিং ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তৎপরতা চালান। এ অবস্থায় গত প্রায় ১০ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি অচলাবস্থার মুখে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়টির সংস্কার ২৪ ঘন্টার মধ্যে করার দাবি জানিয়ে রবিবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন।

এর আগে শনিবার তারা একটি স্পষ্ট বিবৃতি দেন। এতে ট্রাস্টি বোর্ডে ভারতীয় নাগরিক থাকার অভিযোগ, দুই শিক্ষকের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রাখাসহ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা পেয়েও দুই শিক্ষককে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার না করায় সংস্কারে শিক্ষার্থীরা উদ্যোগী হন।

রবিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন লিডিং ইউনিভার্সিটি শাখার ব্যনারে ক্যাম্পাসে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবহনব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। শিক্ষার্থীরা নিজ খরচে তিনটি বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছায়। এরপর উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলাকে নিরাপদে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেন শিক্ষার্থীরা।

তিনি ক্যাম্পাসে গেলে তার কাছে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের একটি লিখিত কপি হস্তান্তর করেন। উপাচার্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ পদক্ষেপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ১১ দফা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দৃষ্টিতে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বনমালী ভৌমিক অনেকটা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিলেন। উপাচার্য শিক্ষাছুটিতে বিদেশ থাকার সুযোগে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য পদে নিজেই আসীন হয়ে স্থাপত্য বিভাগের দুই শিক্ষককে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করেছিলেন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে শেষে উপাচার্য দেশে ফেরেন।
অভিযোগ ওঠে, উপাচার্যকে নাজেহাল করতে একের পর এক নির্দেশনা জারি করেন বনমালী। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দুই শিক্ষককে বহাল রেখে উপাচার্যের কর্মপরিবেশ দিতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ভারতীয় নাগরিকসহ দুজনকে দুই মাসের মধ্যে বাদ দিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনেরও নির্দেশনা দিয়েছিল। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রায় ৯ মাসেও তা মানেননি বনমালী ভৌমিক। উল্টো তিনি উপাচার্যের কক্ষ তালা দিয়ে রাখেন।

এ রকম অচলাবস্থা নিরসনে গত বছরের ১২ নভেম্বর ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষককে বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলটিমেটামের বিষয়ে জানতে বনমালীর মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। তার দপ্তরের ফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বিবৃতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়ায় কোষাধ্যক্ষ ক্যাম্পাসে যাননি। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড চেয়ারম্যান দানবীর রাগিব আলী আন্দোলনকারীদের পদক্ষেপের বিষয়ে আন্তরিক এবং তিনি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।’

সূত্রঃ খবরের কাগজ

এম.কে
১১ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

মাংস নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

ভারী বর্ষণ, সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, কী তার পরিচয়