যুক্তরাজ্য সরকার শরণার্থীদের জন্য পারিবারিক পুনর্মিলন নীতি কঠোর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার সোমবার সংসদে নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন, যার মধ্যে আশ্রয় প্রক্রিয়া সংস্কার ও পরিবার আনার নিয়ম পরিবর্তন অন্যতম। সরকারের মতে, বর্তমান নীতি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের জন্য আকর্ষণ হিসেবে কাজ করছে।
কুপার তার বক্তব্যে বলবেন, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার, অবৈধভাবে আসা মানুষদের ফেরত পাঠানো এবং আশ্রয় ব্যবস্থা সংস্কারের মধ্য দিয়ে সরকার বিশৃঙ্খলা দূর করতে চায়। তিনি উল্লেখ করবেন, অপরাধী চোরাচালান চক্রকে দমন করার পাশাপাশি আশ্রয় ব্যবস্থায় নতুন কঠোর নিয়ম চালু করতে হবে, যাতে ব্যয়সাপেক্ষ হোটেল ব্যবহার বন্ধ করা যায়।
২০২২ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যে পরিবার পুনর্মিলন ভিসার আবেদন বেড়ে গেছে। জুন ২০২৫ পর্যন্ত এক বছরে ২০,০০০-এর বেশি মানুষ এই ভিসা পেয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩০% বেশি। কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাজ্যের নীতি ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ডেনমার্কে শরণার্থীদের পরিবার আনতে হলে আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দিতে হয়। কুপার একই ধরনের শর্ত আরোপ ও শরণার্থীদের জন্য ন্যূনতম বসবাসকাল নির্ধারণের বিষয় বিবেচনা করছেন।
আশ্রয় প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনা হবে। আপিল শুনানির ক্ষমতা বিচারকদের হাত থেকে সরিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের হাতে দেওয়া হবে, যারা আইন বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে মামলার শুনানি করবেন। কর্মকর্তাদের দাবি, এটি ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থার মতো কাজ করবে।
সরকার আরও জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ সালে মানবপাচারকারী চক্র দমনে ৩৪৭টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যা রেকর্ড সংখ্যা। আগস্টে ছোট নৌকায় চ্যানেল পারাপারের সংখ্যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে। কর্মকর্তারা এর কৃতিত্ব দিয়েছেন গ্রীষ্মকালে বুলগেরিয়ান সীমান্তে নৌকা জব্দের কার্যক্রমকে।
তবুও আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখাকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। এপিংয়ের বেল হোটেলের সামনে বিক্ষোভে দুই পুলিশ আহত হওয়ার পর এসেক্স পুলিশ নতুন নিয়ম জারি করেছে, যেখানে রাত ৮টার মধ্যে বিক্ষোভ শেষ করতে হবে, সড়ক অবরোধ করা যাবে না এবং মুখোশ ব্যবহার করলে তা খুলতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ অধিকাংশ আশ্রয়প্রার্থীকে ব্রিটেনে প্রবেশে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তার নীতি সমালোচিত হয়েছে। ইয়র্কের আর্চবিশপ স্টিফেন কট্রেল একে বলেছেন, এটি “বিচ্ছিন্নতাবাদী, স্বল্পমেয়াদি ও হঠকারী পদক্ষেপ।”
অন্যদিকে, সাবেক লেবার হোম সেক্রেটারি জ্যাক স্ট্র বলেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ (ECHR) থেকে বের হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ড শান্তি চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিনি নীতি-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদনের সমর্থন দিয়ে বলেছেন, “যুক্তরাজ্যের ECHR থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে বেলফাস্ট চুক্তির কোনো বাধা নেই।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫