TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

শরণার্থী হোটেল ঘিরে উত্তেজনা, ক্রলি হয়ে উঠেছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু

যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট সাসেক্সের ক্রলি শহর এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গ্যাটউইক বিমানবন্দরের পাশের এই শহরেই আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীর সংখ্যা দেশের অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে বেশি। শহরটিতে বর্তমানে ১,৭২৯ জন আশ্রয়প্রার্থী ও আইনি শরণার্থী রয়েছেন—যা শহরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৪৩ শতাংশ। এ অবস্থায় ক্রলি এখন ভয়াবহ বাসস্থান সংকট ও অভিবাসনবিরোধী উত্তেজনায় জর্জরিত।

ক্রলির সাবেক কনজারভেটিভ এমপি হেনরি স্মিথ, যিনি সম্প্রতি রিফর্ম ইউকে দলে যোগ দিয়েছেন, অভিযোগ করেছেন যে আশ্রয়প্রার্থীদের কারণে স্থানীয় সেবা খাত চাপে পড়েছে। তিনি বলেন, “এখানে স্কুলে ভর্তি পাওয়া কঠিন, জিপির অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় না, আর বাসস্থান তো সবচেয়ে বড় সংকট।”

বর্তমানে ক্রলির তিনটি হোটেল ও আশপাশের দুটি গ্রামীণ হোটেলে এসব আশ্রয়প্রার্থীকে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯৩৯ জন আফগান নাগরিক—যারা ব্রিটিশ সরকারের হয়ে কাজ করার কারণে তালেবান হুমকিতে দেশত্যাগ করেছেন। গত আগস্টে GB News একটি প্রতিবেদনে দাবি করে—এই হোটেলগুলোতে শরণার্থীরা নাকি বিলাসবহুল কক্ষে থাকে, দামি পোশাক পরে—এর পরপরই অভিবাসনবিরোধী প্রতিবাদ শুরু হয়। ডানপন্থী ইউটিউবাররাও সেখানে গিয়ে লাইভ সম্প্রচার করে হোটেলবাসীদের হয়রানি করেন।

স্থানীয় লেবার এমপি পিটার ল্যাম্ব বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “এই ইস্যুতে কথা বললে ডানপন্থীদের চরমপন্থী কার্যক্রম আরও বাড়বে।” তবে তিনি আগের টোরি সরকারের নীতিকে দায়ী করে বলেন, “আফগান তথ্য ফাঁসের পর হোম অফিস যখন অভিবাসন হোটেলগুলো আবার চালু করে, তখনই এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।”

৩৫ বছর বয়সী আফগান নাগরিক জামাল (ছদ্মনাম) তাদের একজন, যিনি একসময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অনুবাদক হিসেবে কাজ করতেন। তালেবানদের টার্গেটে পড়ার পর তিনি দেশত্যাগের চেষ্টা করেন কিন্তু দীর্ঘদিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি তথ্য ফাঁসের ঘটনায় তার নাম প্রকাশ হওয়ার পর হঠাৎই তাকে যুক্তরাজ্যে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। এখন তিনি ক্রলির এক হোটেলে থাকছেন, স্থানীয় একটি গুদামে ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করছেন, এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিজে বাসা খুঁজে নিতে হবে।

জামাল বলেন, “আমি এখানে নিরাপদ, কিন্তু আমার পরিবার আফগানিস্তানে লুকিয়ে আছে। আমি ব্রিটিশদের জন্য কাজ করেছি, কিন্তু এখনো অনেকেই বোঝে না আমরা কী ত্যাগ করেছি।” আশ্চর্যের বিষয়, তিনিও কিছু প্রতিবাদকারীর সঙ্গে আংশিক একমত। “সব অভিবাসী নিয়ম মানে না, কেউ কেউ অপরাধ করে। কিন্তু যারা কাজ করতে এসেছে, নিয়ম মানে—তাদের প্রতি সম্মান থাকা উচিত,” তিনি বলেন।

শহরের হাউজিং সংকট এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। ক্রলি গত বছর ‘হাউজিং ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করেছে। স্থানীয় কাউন্সিলের তথ্যমতে, বর্তমানে সামাজিক বাসস্থানের জন্য অপেক্ষমাণ পরিবারের সংখ্যা ২,৫০০ ছাড়িয়েছে। লেবার কাউন্সিলর ইয়ান আরভাইন বলেন, “এটা অভিবাসনের জন্য নয়, বরং যেভাবে স্থানীয় পরিবারগুলো ঘর হারাচ্ছে, সেটাই বড় কারণ।”

তিনি আরও বলেন, “৮০–এর দশকে সবাই দোষ দিত একক মায়েদের, এখন দোষ দেওয়া হচ্ছে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের। মানুষ সবসময় কাউকে না কাউকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল কেনার দৌড়ে মুকেশ আম্বানি

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আশ্রয়প্রার্থীদের বিনিময় নিয়ে আলোচনা

“ইইউ থেকে আলাদা হয়ে প্রতিশ্রুতি পালন করেনি যুক্তরাজ্য”

অনলাইন ডেস্ক