যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুশরণার্থীদের বয়স নির্ধারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন করে চালু হতে যাওয়া একটি পাইলট স্কিমে মুখাবয়ব বিশ্লেষণের মাধ্যমে বয়স অনুমান করা হবে, যা বাস্তবায়ন হলে আগামী বছর থেকে সরকারি বয়স যাচাই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ঈগল সংসদে দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে জানান, মুখাবয়ব বিশ্লেষণভিত্তিক বয়স অনুমান প্রযুক্তি লাখ লাখ ছবি দিয়ে প্রশিক্ষিত, যেখানে ব্যক্তির প্রকৃত বয়স নিশ্চিত করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি কোনো ব্যক্তির বয়স নিয়ে সন্দেহ বা বিরোধ দেখা দিলে নির্ভরযোগ্যভাবে বয়সের একটা হিসাব দিতে পারে, যা দ্রুত ও খরচ সাশ্রয়ী।
এই ঘোষণার ঠিক আগেই ব্রিটেনের বর্ডার ও ইমিগ্রেশনের প্রধান পরিদর্শক ডেভিড বোল্ট এক সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যেখানে বয়স যাচাইয়ের প্রচলিত পদ্ধতির অব্যবস্থাপনা এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শিশু শরণার্থীদের উপর মানসিক প্রভাব ও অধিকারবঞ্চনার কথা তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ডোভার প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে অনিশ্চিত ও কঠোর পরিবেশে শিশুদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা যথাযথ বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বোল্ট বলেন, “আমি এমন তরুণদের সঙ্গে কথা বলেছি যারা নিজেদের বয়স নিয়ে হোম অফিসের অবিশ্বাস ও অবজ্ঞার শিকার হয়েছে। তাদের আশা ভেঙে গেছে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর চরম প্রভাব পড়েছে।”
তার মন্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে Refugee Council এর একটি আগের রিপোর্টেও বলা হয়, ১৮ মাসের ব্যবধানে অন্তত ১,৩০০ শিশু ভুলভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, ফলে তারা শিশু হিসেবে প্রাপ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এদিকে, কেবল বয়স যাচাই নয়—সরকারি বিভিন্ন খাতে খরচ কমাতে এবং সেবা কার্যকর করতে এআই ব্যবহারের উদ্যোগ ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব পিটার কাইল ঘোষণা দেন, ওপেনএআই-এর (ChatGPT পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, যার মাধ্যমে বিচার, শিক্ষা এবং নিরাপত্তা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করা হবে।
তবে, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে একাধিক বিতর্কও রয়েছে। হোম অফিস আগে থেকেই ভুয়া বিয়ে শনাক্তে যে এআই সিস্টেম ব্যবহার করছে, তা বিশেষ কিছু জাতিগোষ্ঠীকে অস্বাভাবিকভাবে বেশি টার্গেট করছে বলে সমালোচনা হয়েছে। তাই নতুন এই বয়স যাচাই প্রযুক্তি যেন পক্ষপাতহীন ও মানবিক হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছেন অধিকারকর্মীরা।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স ও ইউনিভার্সিটি অব বেডফোর্ডশায়ারের গবেষকরা ইতিমধ্যে সুপারিশ করেছেন, হোম অফিস যেন একক শিশুশরণার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণে আর একমাত্র সিদ্ধান্তদাতা না থাকে। প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে ঠিকই, তবে মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার জায়গায় যেন কোন ছাড় না দেওয়া হয়—এমনটাই দাবি এখন বিশেষজ্ঞ মহলের।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৩ জুলাই ২০২৫