0.8 C
London
November 22, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

শেখ হাসিনার উৎখাতে ভারত কি চীনের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার মিত্রদের হারাচ্ছে

ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র শেখ হাসিনার পদত্যাগ নয়াদিল্লির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ পররাষ্ট্রনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাবের ভারসাম্য চীনের দিকে ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইস্ট–ওয়েস্ট সেন্টারের অ্যাজাংকট ফেলো নীলন্থি সামারানায়েক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের ‘দিস উইক ইন এশিয়া’য় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ৫ আগস্ট হাসিনার পদত্যাগ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল করে তুলেছে।

নীলন্থি সামারানায়েক বলেন, যুক্তি–তর্কের দিক থেকে প্রতিবেশী নেতাদের মধ্যে শেখ হাসিনা সঙ্গেই ছিল নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতম ও সবচেয়ে টেকসই সম্পর্ক। এখন হাসিনার বিদায় ভারতের জন্য আঞ্চলিক সম্পর্ক খারাপ দিকে মোড় নেওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, বাংলাদেশ এখন এক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগপর্যন্ত এ প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের সমর্থন নেওয়া দরকার হবে।

২০১৪ সালে ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতির উদ্যোগ নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ নীতির উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করা।

মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতবিরোধিতা তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচার চালান। নির্বাচনে জেতার পর দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠান। অগ্রসর হন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার পথে।

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের চেয়ে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখাকে প্রাধান্য দিয়েছে।

বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা জোরালো হয়েছে। গত মে মাসে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বলেছে, তারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়া চালাতে আগ্রহী। সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৯–২০২৩ সময়ে চীনা অস্ত্রের দ্বিতীয় বড় গ্রাহক ছিল বাংলাদেশ (১১ শতাংশ), প্রথম ছিল পাকিস্তান।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য আঞ্চলিক কূটনীতিতে কিছু ধারাবাহিক প্রতিবন্ধকতা যোগ করেছে।

শ্রীলঙ্কায়, ২০২২ সালে অর্থনৈতিক সংকটে দেশটিকে সহায়তা দেয় ভারত। পরে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা জানিয়ে সেখানে চীনের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প আটকে দেয় ও দেশটির গবেষণা নৌযানের উপস্থিতির বিরোধিতা করে ভারত। উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের আগ দিয়ে। তখন মোদি কাচাথিভু দ্বীপের ওপর ভারতের অধিকার দাবি করে রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দেন। ১৯৭৪ সালে দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার কাছে হস্তান্তর করেছিল ভারতের কংগ্রেস পার্টি।

যুক্তি-তর্কের দিক থেকে প্রতিবেশী নেতাদের মধ্যে তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গেই ছিল নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতম ও সবচেয়ে টেকসই সম্পর্ক। এখন হাসিনার বিদায় ভারতের জন্য আঞ্চলিক সম্পর্ক খারাপ দিকে মোড় নেওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

মালদ্বীপে, প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতবিরোধিতা তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচার চালান। নির্বাচনে জেতার পর দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠান তিনি। অগ্রসর হন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার পথে।

নেপালে, চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত কে পি শর্মা ওলি অতীতে ভারতের সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে এসেছেন তিনি।

আফগানিস্তানে, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ দেশের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক বাধার মুখে পড়েছে।

সামারানায়েক বলেন, এসব চ্যালেঞ্জের পরও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ছোট দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যে পুরোপুরি বিবর্ণ হয়ে গেছে তা নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে এখনো সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছে ভুটান।’

নেপালে, চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত কে পি শর্মা ওলি অতীতে ভারতের সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে এসেছেন তিনি। আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ দেশের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক বাধার মুখে পড়েছে।

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, শ্রীলঙ্কায় সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির জন্য আরেক অনিশ্চয়তা। নির্বাচনে বামপন্থী এনপিপির (ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার অ্যালায়েন্স) সম্ভাব্য জয় ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে এক উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তা ডেকে আনতে পারে।

এদিকে সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস–ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘স্টেট অব সাউথইস্ট এশিয়া ২০২৪’ শীর্ষক জরিপের তথ্য বলছে, ভারত দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সবচেয়ে কম কৌশলগত অংশীদারদের একটি, যেখানে এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে ধরা হয় চীনকে।

সূত্রঃ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

এম.কে

১৬ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

অভ্যুত্থানকালের প্রাণহানি তদন্তে শিগগির আসছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল

সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী গ্রেফতার

বাংলাদেশে পান করা ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্যানসারের জীবাণুঃ গবেষণা