আজ ছিল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন—তার সলো ফ্লাইট ট্রেনিং। এটি এমন এক ধাপ যেখানে একজন পাইলটের একক দক্ষতা যাচাই হয়। এই ধাপে কোনো কো-পাইলট বা ইন্সট্রাক্টরের উপস্থিতি থাকে না; পাইলট একাই পুরো ফ্লাইট পরিচালনা করেন। এই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বোঝা যায়, পাইলট যুদ্ধবিমানের মতো জটিল যন্ত্র সফলভাবে সামলাতে সক্ষম কিনা।
সকালেই তৌকির তার এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে উড্ডয়ন করেন পুরাতন কুর্মিটোলা এয়ারফোর্স বেস থেকে। উদ্দেশ্য ছিল নির্ধারিত ট্রেইনিং রুটে উড্ডয়ন সম্পন্ন করা। সে অনুযায়ী উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল এবং রামপুরার আকাশপথে তিনি নিয়মিত ফ্লাইট চালাচ্ছিলেন। তবে ফ্লাইটের কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় বিপর্যয়। কন্ট্রোল রুমে তিনি জানান—বিমান তার উচ্চতা ধরে রাখতে পারছে না, নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে। অর্থাৎ কোনো এক অজানা যান্ত্রিক ত্রুটি ফ্লাইটে দেখা দিয়েছে।
তৎক্ষণাৎ কন্ট্রোল রুম থেকে তৌকিরকে ইজেক্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একটি যুদ্ধবিমান থেকে পাইলটের ইজেক্ট করে জীবন বাঁচানোর সুযোগ থাকলেও, তৌকির সে নির্দেশ মানেননি। বরং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন বিমানটি নিরাপদে ফিরিয়ে আনার। জানা গেছে, তিনি তার বিমানকে সর্বোচ্চ ম্যাক স্পিডে চালিয়ে আবার বেসের দিকে ছুটে আসার চেষ্টা করেন। এই পুরো সময়টায় তার মনোযোগ ছিল বিমানটি এবং সম্ভাব্য জনবহুল এলাকায় তা যেন বিধ্বস্ত না হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কন্ট্রোল রুমের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সময় থেকে এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই এফ-৭ বিমানটি ঢাকার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের কাছে বিধ্বস্ত হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে কেবল বোঝা সম্ভব হবে ঠিক কী ধরণের টেকনিক্যাল ত্রুটি এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তবে এই ঘটনা পরিষ্কার করে দিয়েছে—ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির নিজের জীবন না বাঁচিয়ে দায়িত্বকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহস, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত রেখে তিনি বিদায় নিলেন আকাশ থেকে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
২১ জুলাই ২০২৫