২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবরের পর থেকে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০-এর জন্য আর কোনো ফ্রি সাপোর্ট বা নিরাপত্তা আপডেট দেবে না। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই তারিখের পর থেকে সফটওয়্যারটি চালু থাকলেও তা ধীরে ধীরে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার ও হ্যাকারদের আক্রমণের জন্য আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মাইক্রোসফটের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবহারকারী এখনো উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন, যদিও ২০২১ সালে উইন্ডোজ ১১ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর জন্যই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এখন সতর্কবার্তা দিচ্ছেন।
মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উইন্ডোজ ১১ আধুনিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে বেশি সক্ষম। এটি TPM 2.0 নিরাপত্তা চিপ ব্যবহার করে, যা ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার চালিয়ে যাবেন, তারা হ্যাকারদের টার্গেটে পরিণত হতে পারেন। ভোক্তা অধিকার সংগঠন Which? সতর্ক করেছে, শুধু যুক্তরাজ্যেই প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এখনো উইন্ডোজ ১০ চালু রাখার পরিকল্পনা করেছেন।
উইচ টেক ম্যাগাজিনের সম্পাদক লিসা বারবার বলেন, “অপরাধীরা এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাবে। তারা দুর্বল সিস্টেমে প্রবেশ করে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকি এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বিনামূল্যে উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করা। যদি কম্পিউটারটি চার বছরের কম পুরনো হয়, তাহলে সেটি সহজেই উইন্ডোজ ১১ চালাতে সক্ষম হবে। এর জন্য ন্যূনতম ৪ গিগাবাইট র্যাম, ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ এবং TPM 2.0 প্রয়োজন।
যাদের কম্পিউটার উইন্ডোজ ১১ চালাতে অক্ষম, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মাইক্রোসফটের এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেট (ESU) প্রোগ্রাম চালু থাকবে ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। যারা মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টে লগইন করেন, তারা এই সেবাটি বিনামূল্যে পাবেন, অন্যদের জন্য খরচ পড়বে প্রায় ৩০ ডলার।
এ ছাড়া ব্যবহারকারীরা চাইলে লিনাক্স (Linux) অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে নিরাপদভাবে তাদের পুরনো কম্পিউটার ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারেন। জনপ্রিয় বিকল্প উবুন্টু (Ubuntu) বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট সরবরাহ করে।
যাদের কাজ মূলত ইন্টারনেটভিত্তিক, তারা গুগলের ChromeOS Flex ব্যবহার করতে পারেন। এটি হালকা ও দ্রুত একটি সিস্টেম, যা পুরনো কম্পিউটারেও চালানো যায়।
তবে যেসব ডিভাইস খুব পুরনো বা নতুন সফটওয়্যার চালাতে অক্ষম, তাদের জন্য নতুন উইন্ডোজ ১১-চালিত কম্পিউটার কেনাই সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। মাইক্রোসফটসহ বিভিন্ন বিক্রেতা বর্তমানে ট্রেড-ইন ও রিফার্বিশড অফার দিচ্ছে, যেখানে পুরনো কম্পিউটার ফেরত দিয়ে নতুন কেনায় ছাড় পাওয়া যাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি শিল্পে নতুন ধাপের সূচনা করছে। একদিকে এটি ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা জোরদার করবে, অন্যদিকে পুরনো ডিভাইসগুলো দ্রুত বাতিল হওয়ার ফলে ই-ওয়েস্ট বা প্রযুক্তিগত বর্জ্য বৃদ্ধির আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
উইন্ডোজ ১০-এর বিদায়ের সঙ্গে শেষ হচ্ছে এক যুগের প্রযুক্তি স্মৃতি। কিন্তু এর উত্তরসূরি উইন্ডোজ ১১ ও ভবিষ্যতের স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তার দিগন্ত খুলে দিচ্ছে—যেখানে আপডেট না থাকলে নিরাপত্তাই হারিয়ে যায়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৫ অক্টোবর ২০২৫