18.2 C
London
May 9, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

শোষণের চেয়ে নিরাপদ নয় যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তাঃ রিপোর্ট

আধুনিক দাসত্বের শিকাররা নির্বাসনের ভয়ে যুক্তরাজ্য সরকার-প্রদত্ত সহায়তা না নিয়ে শোষকদের সঙ্গেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এক গবেষণায় এরকম খবর উঠে এসেছে।

আধুনিক দাসত্ব বিষয়ক স্বাধীন কমিশনার ইলিয়েনর লায়ন্স বলেছেন, এই ব্যবস্থা “গভীরভাবে ভেঙে পড়েছে”।

গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে শেয়ার করা দুটি গবেষণায় দেখা গেছে, আধুনিক দাসত্ব প্রতিরোধে ২০১৫ সালের প্রবর্তিত Modern Slavery Act আইন পাসের এক দশক পরেও এটি শোষণের শিকারদের সুরক্ষা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রথম গবেষণাটি নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটস ল্যাব পরিচালিত এবং কমিশনার লায়ন্সের অফিস কর্তৃক কমিশনকৃত। এটি আগামী বুধবার প্রকাশিত হবে। “Refusal to Consent” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার-প্রদত্ত সহায়তা গ্রহণে শোষণের শিকারদের অস্বীকৃতির সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছেছে।

যেসব সম্ভাব্য শিকার সরকারিভাবে ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম (NRM)-এর অধীনে সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের তথ্যে ‘ডিউটি টু নোটিফাই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই সংখ্যাটি ২০১৬ সালের ৭৬২ থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,৫৯৮-এ — অর্থাৎ ৬৩০% এর বেশি বৃদ্ধি। এতে বোঝা যায়, ভুক্তভোগীদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রধান কারণ হলো, ভুক্তভোগীরা বিশ্বাস করেন ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম সহায়তা নয়, বরং নির্বাসনের ফাঁদ। সরকার কর্তৃক চালানো শত্রুভাবাপন্ন অভিবাসন নীতি এবং বিভাজনমূলক বক্তব্য তাদের সরকারিভাবে সাহায্য চাইতে নিরুৎসাহিত করছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিছু পাচারকারী সরকারের এই ধরনের বক্তব্য এবং নির্বাসনের হুমকিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের শোষণের অবস্থায় আটকে রাখে। বিশেষ করে আলবেনিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে আসা অনেক ভুক্তভোগী সরকারি প্রত্যাবাসন চুক্তির কারণে সহায়তা চাওয়ায় আরও ভয় পাচ্ছেন।

২০২৪ সালে দেখা গেছে, মানব পাচারের শিকারদের মধ্যে অনেককে রুয়ান্ডায় জোরপূর্বক পাঠানোর জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ফলে তারা সরকারকে পুরোপুরি অবিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।

দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি “Barriers to Prosecutions and Convictions under the Modern Slavery Act 2015”, যা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Modern Slavery and Human Rights Policy and Evidence Centre (PEC) কর্তৃক পরিচালিত এবং ইউনিভার্সিটি অব হাল-এর Wilberforce Institute দ্বারা গবেষণাভিত্তিক। তারা দেখিয়েছে, ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম-এ রেফার করা সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের তুলনায় বিচার ও দণ্ডের হার অত্যন্ত কম — মাত্র ১.৮%।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৭,১২০ জন ভুক্তভোগী ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম-এ রেফার হন, অথচ একই সময়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মাত্র ৫৮ জন আধুনিক দাসত্ব সংশ্লিষ্ট অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন।

গবেষক অ্যালিসিয়া হেইস বলেন, “Modern Slavery Act-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা। কিন্তু এক দশক পার হলেও শাস্তির হার হতাশাজনক। অনেক সময় অপরাধীদের মাদক বা পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হয়, যা ভুক্তভোগীর আসল অভিজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে না।”

কমিশনার লায়ন্স বলেন,
“এটা হৃদয়বিদারক, কিন্তু অবাক করার মতো নয় যে  ভুক্তভোগীরা এখন সরকারিভাবে সহায়তা নিতে রাজি হচ্ছেন না।
যখন নির্বাসনের ভয় সহায়তার আশ্বাসকে ছাপিয়ে যায়, যখন অপরাধীরা শাস্তি পায় না, আর মানুষ শোষণের মধ্যে থাকাকেই নিরাপদ ভাবে — তখন বুঝতে হবে, ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই প্রতিবেদন একটি সতর্কবার্তা। NRM শুধু ভুল বোঝা নয়, বরং জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে, ভুলভাবে পরিচালিত হচ্ছে, এবং এখনই সংস্কার দরকার।”

হোম অফিসকে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১০ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো শিশুদের দুধ শিল্পের ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে

হাই এন্ড ফিটনেস চেইন নিয়ে বিপাকে রিশি সুনাকের স্ত্রী

ইরাক যুদ্ধের গোপন নথি পুড়িয়ে ফেলতে বলায় তোপের মুখে টনি ব্লেয়ার