যুক্তরাজ্যে শোষণমূলক শ্রমে তৈরি পণ্য অবাধে প্রবেশ করছে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পার্লামেন্টের মানবাধিকার সংক্রান্ত যৌথ কমিটি। তাদের মতে, সরকারের কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় চীন, কঙ্গোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আধুনিক দাসত্বের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য সহজেই ব্রিটিশ বাজারে প্রবেশ করছে।
প্রতিবেদনটিতে কঙ্গোর খনিতে শিশুদের ব্যবহার এবং বিষাক্ত ধুলাবালির মধ্যে কোনো সুরক্ষা ছাড়াই কাজ করানোর মতো ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ কোবাল্ট, যা ব্যাটারি ও চুম্বকে ব্যবহৃত হয়, এই দেশ থেকেই আসে — এবং সেই উপাদানে তৈরি পণ্য সরাসরি যুক্তরাজ্যে ঢুকছে বলে জানানো হয়েছে।
BBC-এর একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যে বিক্রি হওয়া কিছু টমেটো ‘ইতালির’ লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করা হলেও, সেগুলোর উৎপত্তি আসলে চীনে এবং সেগুলো শোষণমূলক শ্রমের মাধ্যমে উৎপাদিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, চীনা মাছ ধরার জাহাজে উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মূল ভূখণ্ডে না নামিয়ে কাজ করানো হচ্ছে—যা আধুনিক দাসত্বের এক নিষ্ঠুর রূপ।
বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত প্রতি পাঁচটি তুলাজাত পণ্যের মধ্যে একটির সঙ্গে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর মুসলিমদের শ্রমিক শোষণের সম্পর্ক রয়েছে। এসব পণ্য যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে, যার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়নি।
মানবাধিকার কমিটির চেয়ার লর্ড ডেভিড অলটন বলেন, অন্যান্য দেশ যেখানে শোষণমূলক শ্রম নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে যুক্তরাজ্য মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছে। তিনি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন এসব পণ্য আমদানি ও বিক্রিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক সরবরাহ-পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা (due diligence) চালু করা হয়।
প্রতিবেদনটি আরও বলছে, ইলেকট্রনিকস, পোশাক, মাছ, কাঠ ও বস্ত্র খাতে শ্রমিক শোষণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই পাঁচটি খাত থেকে প্রতি বছর প্রায় £১৯ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য যুক্তরাজ্যে আমদানি হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পিটার ফ্র্যাঙ্কেনটাল বলেছেন, যুক্তরাজ্যের স্বেচ্ছাধীন নীতিমালা শ্রমিক শোষণ মোকাবেলায় একেবারেই অকার্যকর। তিনি HMRA-কে আহ্বান জানিয়েছেন, শোষণমূলক শ্রমে উৎপাদিত সন্দেহভাজন পণ্য জব্দ করতে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ‘Proceeds of Crime Act’-এর আওতায় তদন্ত করতে।
প্রতিবেদনটি সুপারিশ করেছে, ভবিষ্যতের বাণিজ্য চুক্তিতে আধুনিক দাসত্বের ঝুঁকি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। বিশেষত, নবায়নযোগ্য শক্তির প্রযুক্তি—যেমন সৌরপ্যানেল—তৈরিতে ব্যবহৃত খনিজ উপাদানগুলো উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “যুক্তরাজ্যে কোনো কোম্পানিরই শ্রমিক শোষণ মেনে নেওয়া হবে না। আমরা একটি দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে নীতিমালা পর্যালোচনা করছি এবং মানবাধিকার কমিটির সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।”
সূত্রঃ বিবিসি / দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
২৫ জুলাই ২০২৫