TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

সপ্তাহে £১০০ ভাতা, দেশে ফেরার জন্য £৩,০০০— আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে লেবার সরকারের বড় পদক্ষেপ

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেল থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য লেবার সরকার এক নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর আওতায় যারা পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে থাকতে পারবেন, তাদের সপ্তাহে £১০০ ভাতা দেওয়া হবে। হোম অফিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৬ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প চালু করা হবে।

 

বর্তমানে হোটেলে থাকা আশ্রয়প্রার্থীরা সাপ্তাহিক £৪৯.১৮ করে জীবিকা ভাতা পান। নতুন এই পরিকল্পনায় অতিরিক্ত £১০০ যোগ হলে সরকার আশা করছে, আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেল আবাসন ব্যয় প্রায় এক সপ্তমাংশে নেমে আসবে। ২০২৫ সালের জুনে তথ্য অনুযায়ী, ২০০ হোটেলে ৩২,০০০ অভিবাসী অবস্থান করছিলেন, যেখানে প্রতিজনের জন্য সরকারের খরচ হয়েছে সপ্তাহে £১,০১৫, মোট বার্ষিক ব্যয় £২.১ বিলিয়ন।

লেবার পার্টি ঘোষণা করেছে, ২০২৯ সালের মধ্যে পুরোপুরি হোটেল ব্যবস্থা বন্ধ করা হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার মন্ত্রিসভাকে এক বছরের মধ্যেই তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্কটল্যান্ডের ইনভারনেস এবং ইংল্যান্ডের ক্রোবরোতে দুটি সাবেক সামরিক ব্যারাকে ৯০০ অভিবাসীর জন্য নতুন আবাসন প্রস্তুত করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে হোম অফিস আরেকটি প্রণোদনা কর্মসূচি চালু করছে, যার আওতায় যেসব আশ্রয়প্রার্থী নিজ দেশে ফিরে যেতে রাজি, তারা সর্বোচ্চ £৩,০০০ পর্যন্ত সহায়তা পাবেন। এই অর্থ তাদের দেশে ফিরে বাসস্থান, চাকরি বা ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করবে। লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে আলবেনিয়া, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, চীন, ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের নাগরিকদের।

এই পরিকল্পনাকে “লজ্জাজনক” বলে সমালোচনা করেছেন কনজারভেটিভ পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ। তিনি বলেন, “যারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে ঢুকেছে, তাদের করদাতাদের অর্থ দেওয়া নৈতিকভাবে ঘৃণিত। দেশটিকে ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ (ECHR) থেকে বেরিয়ে এসে অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে হবে।”

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, £১০০ ভাতা পেতে হলে আশ্রয়প্রার্থীকে প্রমাণ দিতে হবে যে তার থাকার উপযুক্ত জায়গা আছে এবং নিয়মিতভাবে হোম অফিসে রিপোর্ট করতে হবে। এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, “সরকার অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা এবং হোটেল নির্ভরতা নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাই আমরা প্রতিটি আশ্রয় হোটেল বন্ধ করব।”

এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক জনঅসন্তোষও। চলতি গ্রীষ্মে এসেক্সের এপিং এলাকায় এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় এক আশ্রয়প্রার্থীর গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে হোটেলের সামনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ নভেম্বরে আশ্রয় ব্যবস্থার বৃহত্তর সংস্কার পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। এতে ডেনমার্কের মতো কঠোর নীতি অনুসরণের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে— যেখানে শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে রাখা হবে এবং সংঘাত শেষ হলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

লেবার সরকারের নতুন নীতি অনুযায়ী, আশ্রয়প্রাপ্তরা কেবল তখনই স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি (Indefinite Leave to Remain) পাবেন, যখন তারা কাজ করবে, কোনো সরকারি সুবিধা নেবে না, ইংরেজি দক্ষতা অর্জন করবে এবং অপরাধমুক্ত থাকবে। পাশাপাশি, আশ্রয়প্রাপ্তরা পরিবার আনতে পারবে কমপক্ষে দুই বছর পর, যদি তারা প্রমাণ করতে পারে যে তাদের পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে লেবার সরকার একদিকে আশ্রয়প্রক্রিয়াকে বাস্তবসম্মত করতে চায়, অন্যদিকে করদাতাদের ওপর চাপ কমিয়ে আশ্রয় সংকটের আর্থিক ও সামাজিক ভারসাম্য পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়েছে।

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে ১০,০০০ শরণার্থী ভিসা চালু করার আহ্বান

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্য হতে একজন পর্তুগীজ নাগরিককে ডিপোর্ট করতে চায় হোম অফিস

রুয়ান্ডা প্রকল্পের নামে ১৩৪ মিলিয়ন ফান্ড ধ্বংস করেছে কনজার্ভেটিভ সরকারঃ রিপোর্ট