যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত হোটেলগুলোতে ইঁদুরের উপদ্রব, অতিরিক্ত ভিড় এবং নিম্নমানের খাবারের কারণে ব্যাপক অপুষ্টির ঘটনা ঘটছে—সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। দাতব্য সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রান্ট ফোরাম অফ এসেক্স অ্যান্ড লন্ডন (RAMFEL) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের নাম ‘Profiting From People: Inside the UK’s Asylum Hotels’, যেখানে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৯৩ জন আশ্রয়প্রার্থীর অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, হোটেলগুলোতে একেকটি কক্ষে ছয় সদস্যের পরিবারকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। অনেক হোটেলে খাবার এতটাই নিম্নমানের যে তা খাওয়া যায় না—কখনও পুড়ে যাওয়া, কখনও আবার বরফ জমে থাকা অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। প্রতিবন্ধী বা অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিশুদের পুষ্টিহীনতা ও ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টি সেখানে ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলছে।
RAMFEL-এর হিসাব অনুযায়ী, হোম অফিসের তিনটি আবাসন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ বছরে সম্মিলিতভাবে £৩৮০ মিলিয়ন মুনাফা করেছে—যার মানে প্রতি মিনিটে প্রায় £১৪৬ আয়। অথচ সরকার বারবার আশ্রয় হোটেল বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত হোটেলের সংখ্যা মাত্র তিনটি কমেছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংসদের হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটি জানিয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি অব্যবস্থাপনার কারণে হোম অফিস আশ্রয় আবাসন প্রকল্পে বিলিয়ন পাউন্ড অপচয় করেছে। বিভাগটি সম্প্রতি হোটেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে £৭৪ মিলিয়ন ফেরত আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যা এই খাতের অদক্ষতা ও অস্বচ্ছতার স্পষ্ট প্রমাণ।
প্রতিবেদন বলছে, অনেক হোটেলে এমন অবস্থাও দেখা গেছে যে, কক্ষে একটি ছোট টেবিলে কেউ বসলে অন্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়; শিশুদের বিছানাকেই পড়াশোনা ও খাবার টেবিল হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। একাধিক হোটেলে ইঁদুরের উপদ্রব এতটাই সাধারণ যে এক পরিবার তাদের কক্ষে পাঁচটি ইঁদুর গণনা করেছে। ডাক্তারদের (GP) পাঠানো একাধিক চিঠিতেও আশ্রয় হোটেলগুলোর পরিবেশ ও খাদ্যমান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
RAMFEL-এর প্রচারপ্রধান নিক বিলস বলেছেন, “রাজনীতিবিদেরা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এই হোটেলগুলোকে বিলাসবহুল পাঁচতারা আশ্রয় হিসেবে উপস্থাপন করছেন। কিন্তু বাস্তবে এগুলো অস্বাস্থ্যকর, অখাদ্য খাবারযুক্ত এবং ন্যূনতম মানবিক মানদণ্ড থেকেও নিচে।”
তিনি বলেন, “সরকারের উচিত আরও নিষ্ঠুর আশ্রয়ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা নয়, বরং সম্প্রদায়ভিত্তিক আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা—যা সরকারের ব্যয় কমাবে এবং শরণার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের সামাজিক সংহতি বাড়াবে।”
হোম অফিস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এখনো জানায়নি। তবে বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব সাসেক্সের ক্রোবরো এবং স্কটল্যান্ডের ক্যামেরন (ইনভারনেস) সামরিক ঘাঁটিকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে, পাশাপাশি আরও কিছু কম খরচের স্থাপনাও পর্যালোচনায় রয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

