ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার দেড় বছরের বেশি সময় পর মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং পদত্যাগ করেছেন। রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) তার নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ দেখা যাওয়ায় রোববার পদত্যাগ করেছেন তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, দলীয় কোন্দল থামাতে ও সংসদে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সম্ভাব্য অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন বীরেন সিং। রোববার সন্ধ্যায় রাজ্যের গভর্নরের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং।
রাজ্য সরকার থেকে কনরাড সাংমার জাতীয় পিপলস পার্টি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া সত্ত্বেও বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তবে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন চাওয়া বিজেপির বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবে সায় দিতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বীরেন সিং।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, গত কিছু দিন ধরেই দলের ভেতরে ও বাইরে দ্বিমুখী চাপের মুখোমুখি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। এই পরিস্থিতিতে রোববার সকালে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেন বীরেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিজেপি ও নাগা পিপলস ফ্রন্টের (এনপিএফ) ১৪ জন বিধায়ক। মাত্র ১৫ মিনিটের বৈঠকের পর ইম্ফলে ফিরেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন বীরেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, মণিপুর বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছিল কংগ্রেস। এছাড়া বীরেনের নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন রাজ্যের বিজেপি বিধায়করাও। ভোটাভুটি হলে বীরেন সরকারের পতনের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয় সেখানে। এর মাঝে বীরেনের পদত্যাগ ছাড়া কোনও গতি ছিল না।
গত প্রায় দেড় বছর ধরে অশান্ত পরিস্থিতিতে রয়েছে মণিপুর। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রথম মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের সহিংস আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই রাজ্য। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েক জন বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের পাঁচ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবাও। রাজ্যের দুই জাতিগত গোষ্ঠীর এই সংঘাতে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সূত্রঃ এনডিটিভি
এম.কে
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫