যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি কনজারভেটিভদের নতুন অভিবাসন পরিকল্পনাকে “পুরোপুরি ঘৃণ্য ও অমানবিক” আখ্যা দিয়েছে। দলটির দাবি, কনজার্ভেটিভ পার্টি “সাংস্কৃতিক ঐক্য” বা “cultural coherence” গড়ার নামে আইনসম্মতভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসীদের দেশ থেকে তাড়ানোর নীতি গ্রহণ করেছে, যা মানবাধিকারের পরিপন্থী।
কনজারভেটিভ পার্টির সদর দপ্তর সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে যে, তাদের এমপি কেটি ল্যাম-এর সাম্প্রতিক মন্তব্য— যেখানে তিনি ‘সাংস্কৃতিক ঐক্য রক্ষায়’ কিছু মানুষকে দেশ থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানান— সেটিই এখন পার্টির আনুষ্ঠানিক নীতি। এই মন্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে, বিশেষ করে যখন জানা যায়, নীতিটি আইনি বসবাসের অধিকারপ্রাপ্তদেরও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
টরিদের প্রস্তাবিত Private Member’s Bill-এর তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছে, “indefinite leave to remain (ILR)”— অর্থাৎ স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের অনুমতি— কিছু শ্রেণির অভিবাসীর ক্ষেত্রে বাতিল করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেন তারা, যারা রাষ্ট্রীয় ভাতা (benefits) নিচ্ছেন বা যাদের বার্ষিক আয় £৩৮,৭০০ পাউন্ডের কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতি যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার বৈধ অভিবাসীর জীবন ও ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলবে।
লেবার পার্টির চেয়ার আনা টারলি এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে বলেন,
“আইনসম্মতভাবে এখানে বসবাসের অধিকার থাকা মানুষদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে তথাকথিত ‘সাংস্কৃতিক ঐক্য’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা সম্পূর্ণ ঘৃণ্য। এটি পরিবারগুলোকে ছিন্নভিন্ন করবে, প্রতিবেশীদের সমাজ থেকে উপড়ে ফেলবে। টরিরা এখন এমন নীতি নিচ্ছে যা তাদের রাজনৈতিক ও নৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রতীক।”
তিনি আরও যোগ করেন, এই নীতির মাধ্যমে টরিরা আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক সমাজের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন।
“তারা এখনো শিখতে পারেনি যে ব্রিটেনের শক্তি তার বৈচিত্র্যে— বিভাজনে নয়।”
এদিকে, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে তা শুধু যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজার নয়, আন্তর্জাতিক সুনামেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা সতর্ক করেছে, “সাংস্কৃতিক ঐক্য” শব্দবন্ধের আড়ালে সরকার প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের বর্ণবাদী ও শ্রেণিভিত্তিক বাছাইনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
লেবার পার্টি বলেছে, কনজারভেটিভদের এ ধরনের নীতির বিরুদ্ধে তারা সংসদ ও জনপরিসরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে লড়বে। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “এটি শুধু রাজনৈতিক বিষয় নয়— এটি ন্যায়ের প্রশ্ন, মানবতার প্রশ্ন।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে