10.8 C
London
November 16, 2024
TV3 BANGLA
প্রবাসে বাংলাদেশ

সাইপ্রাসে পুলিশি অভিযান: পাঁচ তলা থেকে লাফিয়ে প্রাণ গেল এক বাংলাদেশির

অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চলছিল সাইপ্রাসে৷ পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পাঁচতলা একটি ভবন থেকে ঝাঁপ দেন ২৩ বছর বয়সি এক বাংলাদেশি। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তার৷

একই বাড়িতে বসবাসকারী ২২ বছর বয়সি আরেক ব্যক্তি বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেন৷ সাড়ে সাত মিটার নিচে পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় পড়ে যান তিনি। শরীরে একাধিক ফাটল নিয়ে গুরুতর অবস্থায় লিমাসোল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

লিমাসোলের সিটি সেন্টারের এই ভবনে বাংলাদেশের মোট ১১ জন অভিবাসী থাকতেন। প্রত্যেকেই অনিয়মিত ছিলেন বলে মনে করছে পুলিশ। অনেকদিন আগে এই ভবন ‘বসবাসের জন্য বিপজ্জনক’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল পৌর কর্তৃপক্ষ। তবুও কীভাবে এখানে এতজন ভাড়া ছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷

বাংলাদেশের অনারারি কনস্যুলেট সাইপ্রাস মেইলকে বলেছেন, “এটা দুঃখজনক৷ পুলিশ এই অভিযান চালানোর জন্য ঈদের দিনটিকে বেছে নিলো! এর ফলে এমন করুণ পরিণতি হলো।’’

পুলিশি রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন বলেও জানান তিনি৷

মাইগ্রেশন বিভাগের পুলিশ অফিসার পেত্রোস জেনিয়োসের কথায়, “এক অভিবাসী পুলিশি নজরদারি থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় পাঁচ তলার আবাসন থেকে লাফ দেন৷ তিনি প্রাণ হারিয়েছেন৷’’

ওমেগা নিউজকে তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনা দুঃখজনক৷’’

সাইপ্রাসের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী জানিয়েছে, ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক এই বাড়িতে থাকার জন্য মাসে মোট দুই হাজার ইউরো ভাড়া দিতেন। তারা পার্শ্ববর্তী এলাকার রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন।

অভিযানের সময় এক প্রতিবেশী পুলিশকে জানান, ওই ভবনে অনিয়মিত অভিবাসীরা বসবাস করছেন। এরপর বাড়িওয়ালাকে ভাড়ার চুক্তি নিয়ে থানায় হাজিরা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।

লিমাসোল সিআইডি পুলিশপ্রধান লেফটেরিস কিরিয়াকোউ সাইপ্রাস মেইলকে বলেছেন, ২৩ বছর বয়সি তরুণের পরিবারের সদস্যদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে৷ তবে তিনি অনিয়মিত অভিবাসী বলে এই কাজটা বেশ কঠিন।

ওই ভবনে এত জন লোক কীভাবে বাস করছিলেন জানতে চাইলে জেনিয়োস বলেন, “হলওয়েটি বেডরুম হিসেবে ব্যবহার করতেন অভিবাসীরা। মূল বেডরুমে সাত থেকে আটজন লোক থাকত।”

গদিগুলো প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী বিছানা হিসাবে ব্যবহার করা হতো৷ কিরিয়াকোউয়ের কথায়, ‘‘অনেক সময় আমরা আরো বেশি লোককে ঠাসাঠাসি করে থাকতে দেখেছি। তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটে ৩৫ থেকে ৪০ জন মতো বাসিন্দা থাকতেন।’’

কিরিয়াকোউ বলেন, “অভিবাসীরা অর্থ সঞ্চয় করার চেষ্টা করে যাতে পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা পাঠাতে পারে। এমনকি মানব পাচারকারীদেরও টাকা দিতে হয় অনেক সময়। তাই তারা কম ভাড়ার আবাসন খোঁজার চেষ্টা করেন।”

জেনিয়োস বলেন, ‘‘বাড়িওয়ালারা অভিবাসীদের ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার ইউরো লাভ করে৷’’

লিমাসোলের সিআইডি প্রধানের দাবি, “পুলিশ ফ্ল্যাটে প্রবেশের আগেই, দুই অভিবাসী লাফ দিয়েছিলেন। একজন ভবনের এক পাশ থেকে লাফ দেন৷ পুলিশ তা আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷ সাহায্য করতে চেয়ে এক পুলিশ অফিসার দৌড়ানোর চেষ্টা করেন, তখন বুঝতে পারেন আরেকজন অভিবাসী জানালা দিয়ে ঝুলছেন।”

পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থলে থাকা অফিসার ফ্ল্যাটে থাকা কয়েকজন অভিবাসীর কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার আগে ওই “অভিবাসী ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারান।”

কিরিয়াকোউ বলেন, একজন মাইগ্রেশন অফিসার বাকিদের কাগজপত্র পরীক্ষা করবেন এবং তাদের সম্ভবত নির্বাসনে পাঠানো হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের ভবনে নজরদারির জন্য আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রয়োজন হয় না। তার কথায়, “যখন মাইগ্রেশন পুলিশ অনিয়মিত অভিবাসীদের খোঁজে আসে, সেটা জনগণনার মতো। তারা অ্যাপার্টমেন্ট দেখে, দরজায় কড়া নাড়ে এবং ভাড়াটেরা সম্মতি দিলে সেখানে বসবাসকারীদের নথিভুক্ত করা হয়।”

সূত্রঃ সাইপ্রাস মেল ডট কম

এম.কে
১৩ এপ্রিল ২০২৪

আরো পড়ুন

রোমানিয়ায় বাতিল ৯ বাংলাদেশীর ওয়ার্ক পারমিট, ফিরতে হবে দেশে

২০২৩ সালে গ্রিসে বৈধতা পেয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি

ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন সৌদি, দুবাই, লেবাননফেরত শ্রমিকরা