7.6 C
London
January 24, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশসিলেট

সাজা দিয়েও সামলাতে হিমশিম বিএনপি, সিলেট হতে পারে কমিটি বাতিল

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দল ও নেতাদের ভাবর্মূতি আরও বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। তবে দলের হাইকমান্ডের এ আশা পূরণে ‘পথে কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন মাঠপর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী। তাদের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না দলটি। আড়াই মাসে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কারসহ নানা সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় নেতাকর্মী দলের কঠোর অবস্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে দলটির হাইকমান্ড। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে লাগাম টানার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অবশ্য বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের ‘জিরো টলারেন্সে’র কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ অপকর্ম ও বিরোধে জড়িয়ে এরই মধ্যে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী দল থেকে বাদ পড়ছেন। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব–কোন্দল থাকলেও প্রকাশ্যে বিরোধে জড়াতে ভয় পাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে নিজের এবং দলের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে ‘গোপনীয়তা ও সর্তকতা’ অবলম্বনের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন।

দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মনে করেন, সারাদেশের মুষ্টিমেয় নেতাকর্মীর নেতিবাচক কাজের দায় দলের সবাইকে নিতে হচ্ছে। নানা কায়দায় যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নিয়েছেন এখনও তারাই চাঁদাবাজি ও দখলদারিতে জড়িয়ে পড়ছেন।

বিএনপি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর সারাদেশে ১ হাজার ৪৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৭ জনকে কারণ দর্শানোর নেটিশ, ৪৫১ জনকে বহিষ্কার, ২৫ জনের পদ স্থগিত, ৩৬ জনকে সতর্ক এবং ৫ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও থানা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়েছেন।

আলোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের গাড়ি সরানোর ঘটনায় জড়িত থাকায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ তিন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ওই কমিটি। ‘দলীয় আদর্শের পরিপন্থি’ বক্তব্যের জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে। ফরিদপুরের নগরকান্দায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এক কর্মী নিহতের ঘটনায় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে।

দখল-হামলার ঘটনায় স্থগিত করা হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় পদ। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কারের পর দলের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে ময়মনসিংহের বিএনপি নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর বিরুদ্ধে। সাইফুল আলম নিরবের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে একই অভিযোগে। ফ্ল্যাট উদ্ধারে গিয়ে এক ব্যক্তিকে মারধর এবং পরে তার মৃত্যুর ঘটনায় স্থগিত করা হয়েছে শেখ রবিউল আলম রবির নির্বাহী সদস্য পদ।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন, খোঁজখবর রাখছেন। তবে ৫ আগস্টের পর যাদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এসব ঘটনা দলীয় পদ-পদবি প্রদান এবং মনোনয়নে ‘আমলনামা’ হিসেবে দেখা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় দৃশ্যমান শাস্তির বাইরেও অনেককে কঠোর ভর্ৎসনা ও সতর্ক করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর, জেলা-উপজেলা সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর ব্যাপারে একই মনোভাব দেখাচ্ছেন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। কোনো লোভ-লালসার সঙ্গে বিএনপির আদর্শ যায় না। গত ১৭ বছরে দলের নেতাকর্মীরা সেটাই প্রমাণ করেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে এখন যেটা ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে সেটা অপপ্রচার। কারণ যখনই কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, সেটা যত বড় নেতার বিরুদ্ধেই হোক, তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দখল-হামলার ঘটনায় শাস্তির মুখে পড়েন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। গত ৭ আগস্ট তার দলীয় পদ স্থগিত করে বিএনপি। কিন্তু স্থানীয় লোকজন বলছেন, বিলকিস আক্তারের শাস্তি হলেও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর দখলদারিত্ব থেমে নেই।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে রয়েছে অনেক নৌকাঘাট ও হাটবাজার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেগুলোতে চাঁদাবাজি শুরু করেন বিএনপির কিছু নেতা। সিলেটের পাথর কোয়ারি, বালুমহাল ও বাসস্ট্যান্ডেও চাঁদাবাজি শুরু হয়। এসব ঘটনায় এরই মধ্যে সিলেট বিভাগে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১০ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত বুধবার সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের দলীয় পদ স্থগিত হয়। জাফলং পাথর কোয়ারির সরকারি সম্পদ, বালু ও পাথর লুটের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, জাফলং পাথর কোয়ারি থেকে বালু ও পাথর লুটের নেপথ্যে রফিকুল ইসলাম শাহপরান ছাড়াও রয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন, জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বকস, সেলিম জমিদারসহ বেশ কয়েকজন।

সিলেট জেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর বিরুদ্ধে গত ৮ আগস্ট জমি দখল ও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেছেন শাহপরান রয়েল সিটি প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলী আশরাফ খান মাছুম। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ভুমি দখল ও চক্রান্ত করে জমি দখলের আরো কথা বাজারে রয়েছে। বিএনপি জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর নামে ২০২৩ সালেও বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল। পরনারী আসক্ত ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় তার নামে। ২০২৩ সালে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর পদে ফিরে আসলেও দ্বিগুণ বেগে বেড়েছে নিজের দলীয় পদের অপব্যবহার।

কোম্পানীগঞ্জ বিএনপির সাবেক নেতা ও পাথর ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা-হামলার অভিযোগ তুলেছেন সুবিদবাজারের এক নারী। মৌলভীবাজার যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলের কালাপুর গ্যাস ফিন্ডের কাজ বাগিয়ে ‍নিতে কর্তৃপক্ষকে হুমকি অভিযোগ উঠেছে। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ভারতীয় চিনির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেও অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জিকে গউছ বলেন, ‘ব্যক্তির দায় দল নেবে না। ব্যক্তি অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের কাছে এবার বিএনপিকে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করতে চাই।’

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে খুলনা বিভাগে গত দুই মাসে ৫৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর আগে গত ১০ আগস্ট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল, ১৭ আগস্ট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল এবং ১৯ আগস্ট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তারপরও নেতাকর্মীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, জেলা, মহানগর, থানা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন হাইকমান্ড। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের আস্থা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এম.কে
২৪ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

নিজের কার্টুন আঁকায় মেহেদি হাসানের প্রশংসায় তারেক রহমান

বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় সুখবর দিল দক্ষিণ কোরিয়া

১৯ দিনেই মেট্রোরেলের আয় ২০ কোটি টাকা, আগে ৬ মাসে ছিল ১৮ কোটি!