TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

সাদাপাথর কান্ডঃ মেঘালয় থেকে সিলেট হয়ে পাথরের ভ্রমণ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

বাংলাদেশের সিলেট সীমান্তে পাওয়া যায় যে সাদা পাথর, তার মূল উৎস ভারতের মেঘালয় মালভূমি। গ্রানাইট ও নাইস প্রভৃতি শক্ত শিলায় গঠিত এ মালভূমি কোটি বছর ধরে প্রকৃতির ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে নুড়ি ও পাথরে রূপ নেয়। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নেমে এ পাথরগুলো পিয়াইন, ধলাই ও গোয়াইন নদীর স্রোতে ভেসে বাংলাদেশে আসে। নদীর স্রোত সমতলে এসে দুর্বল হলে ভারী পাথরগুলো নদীর বাঁক বা চরে জমা হয়ে যায়। ফলে ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়ায় প্রাকৃতিকভাবে বিপুল পাথর সঞ্চিত হয়, যাকে ভূতত্ত্বে ‘প্লাসার ডিপোজিট’ বলা হয়।
এই পাথর কোনো ভূগর্ভস্থ খনি নয়, বরং উন্মুক্ত সঞ্চয়। প্রতি বর্ষায় নতুন করে পাথর জমতে থাকায় একে নবায়নযোগ্য সম্পদও বলা হয়। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের এক জরিপে শুধু ভোলাগঞ্জেই প্রায় ১০.৬ কোটি ঘনফুট পাথরের মজুদ অনুমান করা হয়েছিল। যদিও কেউ কেউ দাবি করেন, বিছানাকান্দিতেও ভোলাগঞ্জের চেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে।
অন্যদিকে মেঘালয়ের খনিজ কোম্পানিগুলো পাহাড় কেটে সরাসরি পাথর উত্তোলন করে। কিন্তু বাংলাদেশের ভাগে আসে প্রাকৃতিকভাবে নদীর স্রোতে ভেসে আসা পাথর, যেন প্রকৃতি নিজেই ডেলিভারি দিয়ে দেয়। এ পাথর সেতু, সড়ক ও ভবন নির্মাণে অপরিহার্য হওয়ায় সিলেট অঞ্চলের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা নির্ভর করে পাথর উত্তোলন, ভাঙা ও পরিবহনের ওপর।
তবে অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত উত্তোলন নদীর তীর ভাঙন, জলজ বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসসহ মারাত্মক পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হয়। এ কারণে ২০১৮ সালে আদালতের নির্দেশে সিলেট অঞ্চলের কোয়ারিগুলোকে ‘পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে সাত বছরের জন্য উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এর ফলে স্থানীয় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে। ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও পরিবেশবাদীরা নতুন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ সময়েই সিলেটে ধারাবাহিকভাবে বড় বন্যা দেখা দেয়—২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২২ ও ২০২৪ সালে। কেউ কেউ মনে করেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর প্রবাহ ব্যাহত হয়ে বন্যা তীব্র হয়েছিল। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূল কারণ ছিল উজানের অতিবৃষ্টির পানি, সঙ্গে নদীর পলি জমে ধারণক্ষমতা হ্রাস।
সীমান্তপারের বৈপরীত্যও চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশে সাত বছর কোয়ারি বন্ধ থাকলেও, ওপারে মেঘালয়ে শত শত খনি চালু থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন চলেছে। ফলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া সম্পদ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ ও অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন জরুরি। যান্ত্রিক খনির পরিবর্তে প্রাকৃতিক স্রোতের চর থেকে সংগ্রহ, পর্যটন এলাকা সুরক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প উপকরণ ব্যবহারের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।
সূত্রঃ ইমজা নিউজ
এম.কে
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

ফিলিস্তিনের জন্য সিলেটে অটোরিকশা শ্রমিকদের ব্যতিক্রমী ভালোবাসা

গান বাংলার চেয়ারম্যান তাপস গ্রেপ্তার

নির্বাচনে ইইউ ও যুক্তরাজ্যের পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে বাংলাদেশঃ প্রধানমন্ত্রী