সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটে জড়িতদের স্থাবর সম্পদের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির স্থগিত সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন এবং তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী আবদুল ওদুদ আলফু মিয়া।
২৫ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে এ তিনজনের নগর এলাকায় থাকা স্থাবর সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, অসাধু যোগসাজশে সাদাপাথর এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করার অভিযোগের তদন্তেই এসব তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানিয়েছেন, তিনি এখনও এ-সম্পর্কিত কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নন।
অভিযুক্ত হিসেবে নাম আসার বিষয়ে এমদাদ হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো চিঠির বিষয়ে জানেন না এবং সাদাপাথর লুটের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি অভিযোগগুলোকে “মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক” দাবি করেছেন।
দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথর লুটপাটের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই কমিশন বিভিন্ন পর্যায়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। শুধু তিনজন নয়, অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্পদ ও অন্যান্য তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩ সেপ্টেম্বর দুদক জানায়, ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটে রাজনীতিবিদ, প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। উপপরিচালক মো. রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি তদন্তদল এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। গত ১৩ আগস্ট দুদকের সিলেট কার্যালয়ের পাঁচ সদস্যের একটি দল সাদাপাথর এলাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। পরে সংকলিত তথ্য-প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে স্থানীয় প্রশাসন, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি, বিএমডি কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তা ও লুটকারীদের সঙ্গে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। ছয়টি ক্যাটাগরিতে লুটে জড়িত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
পাথর লুটের ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো গত ১৫ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করে। এ মামলায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর র্যাব-৯ বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ৪ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওদুদ আলফু মিয়া।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক মদদ এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সাদাপাথরে নজিরবিহীন পাথর লুটপাট হয়। শুধু চলতি বছরেই ওই এলাকা থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পাথর লুটের অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রঃ সোশ্যাল মিডিয়া \ সিলেট টু’ডে
এম.কে

