একজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর ১৯৭৪-৭৫ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। পরবর্তীতে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিচার বিভাগে কর্মজীবন শেষ করে হয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার। পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয় তাকে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীই হন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ২৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ থেকে দায়িত্বাধীন আছেন।
তথ্যানুযায়ী জানা যায় ২০২১ সালের নভেম্বরের ১১ তারিখে মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সংযুক্ত আরব আমিরাতে সেকেন্ড হোমের আবেদন করেন। ওয়ারাদ জেনারেল ট্রেডিং এল এল সি’র মারফতে রাষ্ট্রপতি পার্টনারশিপ ভিসার আবেদন করেছিলেন। কার্ডে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায় এই ভিসার মেয়াদ ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কার্ডের মেয়াদ শেষ হবার পর আবেদন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্ডের মেয়াদ বাড়ার নিয়ম রয়েছে। একজন রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সংবিধানের পদে থাকা অবস্থায় অন্যদেশে সেকেন্ড হোম বা পার্টনারশিপ ভিসা নিতে পারেন কিনা তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা।
মোঃ সাহাবউদ্দিন চুপ্পু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ এবং দুবাইতে ব্যবসা ও সেদেশের রেসিডেন্সি পারমিট গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি তৃতীয় একটি দেশের পাসপোর্টেও বিনিয়োগ করেছেন বলে তথ্যমতে জানা যায়।
রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে ১,৫০,০০০ রিংগিত বিনিয়োগ করেন। তাছাড়া দুবাইয়ে ওয়ারাদ জেনারেল ট্রেডিং এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ করে রেসিডেন্সি ভিসা গ্রহণ করেন।
বিদেশে বিনিয়োগ করতে রাষ্ট্রপতি চুপ্পু বিনিয়োগের কোন অনুমতি গ্রহন করেন নাই বলে তথ্যমতে জানা যায়। কাগজাদি ঘেটে দেখা যায় এই সকল বিনিয়োগ তিনি করেছিলেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিরেকে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম ও দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ বাংলাদেশের আইনানুযায়ী অবৈধ বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, মোঃ সাহাবউদ্দিন চুপ্পু কখনোই এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে নেয়ার অনুমতি নেন নাই বা এই বিনিয়োগের বৈধ কোনো অনুমতি নেই।
উল্লেখ্য যে, সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদের হানি না ঘটিয়ে বিধান করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি তাহার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিংবা অনুরূপ বিবেচনায় কোন কার্য করে থাকলে বা না করে থাকলে সেইজন্য তাকে কোন আদালতে জবাবদিহি করতে হবে না।
সংবিধানের এই ধারার সুবিধা নিয়ে বর্তমান রাষ্ট্রপতি অনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। আইনজ্ঞদের মতে একজন রাষ্ট্রপতি অন্যদেশের সেকেন্ড হোমের জন্য আবেদন দেশের সংবিধান পরিপন্থী কাজ বলে গণ্য হওয়া উচিত। বর্তমান সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়ে অতিরিক্ত কাঁটাছেড়া করায় সংবিধান বাতিল করার আলোচনাও এইসব কারণেই শুরু হয়েছে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া / দৈনিক ইনকিলাব
এম.কে
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪