13.3 C
London
December 19, 2024
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

সিরিয়া থেকে সামরিক ঘাঁটি গুটিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া!

রাশিয়া সিরিয়ার একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে তাদের সামরিক সরঞ্জাম গুটিয়ে নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের পতনের পর রাশিয়ার তরফ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। ম্যাক্সার স্যাটেলাইট প্রকাশিত একটি চিত্র থেকে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার তোলা ছবিতে সিরিয়ার উপকূলীয় লাতাকিয়া প্রদেশের হামেইমিম বিমানঘাঁটিতে অন্তত দুটি আন্তনভ এএন-১২৪ বিমান দেখা গেছে। এই বিমানগুলো বিশ্বের বৃহত্তম কার্গো বিমানের একটি। ছবিতে বিমান দুটোর ডালা খোলা অবস্থায় দেখতে পাওয়া গেছে।

ম্যাক্সার বলেছে, ‘বিমানঘাঁটিতে দুটি এএন-১২৪ ভারী পরিবহন বিমান রয়েছে—উভয়ের ডালা উন্মুক্ত এবং সরঞ্জাম/পণ্য বোঝাইয়ের জন্য প্রস্তুত। কাছাকাছি একটি কেএ-৫২ অ্যাটাক হেলিকপ্টার খুলে ফেলা হচ্ছে এবং সম্ভবত এটিকে ছোট আকারে গুটিয়ে পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিমানঘাঁটিতে আগে মোতায়েন করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটের অংশগুলোও স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

লাতাকিয়ার বিমানঘাঁটিতে সরঞ্জাম গুটানোর কার্যক্রম চললেও ম্যাক্সার জানিয়েছে ভূমধ্যসাগরের তীরে সিরিয়ার বন্দর নগরী তারতুসে অবস্থিত রাশিয়ার নৌঘাঁটি এখনো বহাল তবিয়তে আছে। সেখানে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ম্যাক্সার বলেছে, ‘গত ১০ ডিসেম্বরের আমাদের তোলা ছবিতে যে অবস্থান ছিল গতকাল শুক্রবার তোলা ছবি অনুসারেই তারতুস ঘাঁটির অবস্থান অপরিবর্তিত আছে। তারতুসের উপকূলে দুটি (রুশ) ফ্রিগেট এখনো দেখা যাচ্ছে।’

ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-৪ নিউজ জানিয়েছে, তারা ১৫০ টিরও বেশি রুশ সামরিক যানবাহনের একটি বহরকে সিরিয়ার সড়কপথে চলতে দেখেছে। রুশ সামরিক বাহিনী শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে অগ্রসর হচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল রাশিয়াকে সিরিয়া থেকে শৃঙ্খলাপূর্ণ প্রস্থানের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে।

এই বিষয়ে মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কোফম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘এই প্রত্যাহার সম্ভবত রাশিয়ার সিরিয়া থেকে সম্পূর্ণ প্রস্থানের ইঙ্গিত দিতে পারে, তবে চূড়ান্ত পরিণতি বোঝার জন্য এখনো সময় প্রয়োজন। এটি সম্পূর্ণ প্রস্থান কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়। এর কিছু ইঙ্গিত ও গুজব রয়েছে, তবে প্রমাণ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভালো।’

সিএনএন তুরস্ক জানিয়েছে, রাশিয়া তুরস্কের কাছে তাদের সেনাদের সিরিয়ার তুরস্ক-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় স্থানান্তর করতে সহায়তা চেয়েছে, এরপর তাদের রাশিয়ায় ফেরত নেওয়া হবে। এ ছাড়া, রুশ সংবাদমাধ্যম মস্কো টাইমস জানিয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই রুশ কূটনীতিক স্বীকার করেছেন, তারতুস এবং হামেইমিম থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করছে—এই বিষয়টি খুবই সম্ভব।

কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার গাবুয়েভ মস্কো টাইমসকে বলেছেন, ‘এটি রাশিয়ার আফ্রিকা কর্পসে ও (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে) আঞ্চলিক উপস্থিতির ক্ষেত্রে রুশ সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব ফেলবে। সবকিছুই ভেঙে পড়তে পারে। একটি বিকল্প পাওয়া যেতে পারে—যেমন, আলজেরিয়া—তবে যেকোনো ক্ষেত্রে সবকিছুই অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠবে।’

এদিকে, ক্রেমলিন জানিয়েছে, আসাদের পতনের পর তাদের লক্ষ্য ছিল সিরিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটি এবং কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ক্রেমলিন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) সঙ্গে সিরিয়ায় তাদের ঘাঁটি রক্ষার বিষয়ে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে জ্ঞাত এক ব্যক্তি ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে যে—তারা এইচটিএসের সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে পেরেছ। যা তাদের সিরিয়ার ঘাঁটিতে থাকার অনুমতি দেবে। গত বৃহস্পতিবার রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ সাংবাদিকদের জানান, রাশিয়া এইচটিএসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ক্রেমলিন আশা করে যে, গোষ্ঠীটি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে এবং আলোচনা “গঠনমূলক উপায়ে” এগিয়ে যাচ্ছে।

বোগদানভ রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বলেন, ‘আমার ধারণা, সবাই একমত যে—সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইএসের অবশিষ্টাংশ এখনো শেষ হয়নি। এর জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন এবং এ ক্ষেত্রে (সিরিয়ায়) আমাদের উপস্থিতি ও হামেইমিম ঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অতীতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘাঁটিগুলো এখনো সেখানে আছে, সিরিয়ার ভূখণ্ডে। আপাতত কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

বোগদানভ আরও বলেন, ‘সেগুলো (সেনাঘাঁটি) সিরিয়ার অনুরোধে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে সেখানে ছিল। আমি ধারণা করছি যে, সবাই একমত যে—সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইএসের যা অবশিষ্ট আছে তা শেষ হয়নি। ”

সূত্রঃ জেরুসালেম পোস্ট / ব্লুমবার্গ

এম.কে
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

পুতিনের পতন হবে এবং আমি ফিরে আসবঃ ইউলিয়া নাভালনায়া

ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে পারে কয়েক দশকঃ মেদভেদেভ

শ্রম ভিসায় হজ-ওমরাহ পালনের নীতিতে যে পরিবর্তন আনল সৌদি আরব