সিলেটের জৈন্তাপুরে কৃষি গবেষণায় নতুন এক ইতিহাস রচিত হয়েছে। স্থানীয় সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বহু বছরের গবেষণা শেষে উদ্ভাবন করেছেন মসলা জাতের এক বিশেষ ফসল—বারি গোল মরিচ-১, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল ও দামি মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
গোল মরিচের এই জাত দেখতে অনেকটা পানপাতার মতো লতানো গাছে জন্মে। জৈন্তাপুরসহ দেশের টিলা ও পাহাড়ি মাটিতেই এ ফসল সবচেয়ে ভালো হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বারি গোল মরিচ-১ শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, এর রয়েছে বহুবিধ ওষধি গুণও।
১৯৯০-এর দশক থেকেই জৈন্তাপুর গবেষণা কেন্দ্রে এই জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা শুরু হয়। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে “জৈন্তাপুর গোল মরিচ” নামে পরিচিত হলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর আনুষ্ঠানিক নাম দেয়—বারি গোল মরিচ-১।
প্রতি বছর মে মাসে ফুল ফোটে এবং নভেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে। পূর্ণবয়স্ক প্রতিটি গাছ থেকে ৫-৬ কেজি গোল মরিচ পাওয়া সম্ভব। এ জাতের রোগবালাই অত্যন্ত কম হওয়ায় কৃষকদের জন্য এটি লাভজনক।
চাষাবাদ প্রসারে সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র উদ্যোক্তা ও কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই কৃষকদের কাছে ৩০ টাকা দরে ১০ হাজারেরও বেশি চারা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও খাগড়াছড়ির এক কৃষি উদ্যোক্তা গবেষণা কেন্দ্র থেকে এক হাজার চারা সংগ্রহ করেছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ গোল মরিচ আমদানি করতে হয়। গবেষকরা মনে করেন, বারি গোল মরিচ-১ সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। শুধু দেশের চাহিদা মেটানো নয়, ভবিষ্যতে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ঝুটন চন্দ্র সরকার বলেন, “আমাদের দীর্ঘ গবেষণার ফল বারি গোল মরিচ-১ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচ। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া এ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। উদ্যোক্তা ও কৃষকদের হাতে এটি পৌঁছাতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখবে।”
এম.কে
২৭ আগস্ট ২০২৫