7.3 C
London
April 24, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

সিলেটে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও দাম নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা, নেই নজরদারি

টং দোকানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। ভবনের নিচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেখে দেওয়া সিলিন্ডার

বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেট সিটির পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) চাহিদা। সাধারণ মানুষের এই চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছা মতো দাম নেওয়ার অনৈতিক প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন যত্রতত্র গড়ে উঠা সিলিন্ডার বিক্রেতারা।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা ও মূল্য নির্ধারণে নজরদারি না থাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সিলেট  জুড়ে চলছে সিলিন্ডার ব্যবসার ‘নৈরাজ্য’। ফলে সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারের পানের দোকান থেকে শুরু করে জুতার দোকানে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এতে আশংঙ্কা রয়েছে বিস্ফোরনসহ ভয়াবহ দুর্ঘটনার।

সম্প্রতি সিলেট বিভাগের ওসমানীনগর  উপজেলার তাজপুর এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে   অভিযান পরিচালনা করে গোয়ালাবাজার ও তাজপুরের প্রায় অর্ধ শতাধিক অবৈধ্য এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রেতাদের মধ্যে জরিমানা করা হয়েছিল মাত্র দুইজনকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওই অভিযানকে রহস্যজনক লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহলের অনেকেই ।

এই বিষয়ে সিলেটের রিকাবীবাজার পয়েন্টে আব্বাস আলী নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, শুনেছি আমাদের গ্যাস নাকি কাতার রপ্তানি হবে। আমরা নিজেরাই গ্যাস পাই না আর রপ্তানি করবে এটা কি অনৈতিক নয়? তাছাড়া  সিলিণ্ডারের দাম যদি সরকারের নজরদারিতে থাকত তাহলেও একটা কথা ছিল। এখন প্রায় সব সিলিন্ডার পুরাতন হয়ে গেছে, প্রত্যেকটা সিলিন্ডার  এখন যেন এক একটা বোম। কারণ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তার ব্যবহার চলছে। গ্যাসের গাড়ি দেখলেই আমার ভয় হয়, যদি বিস্ফোরণ হয় তাহলে উপায় কি হবে?  দাম নির্ধারণের কথা না হয় নাই বললাম।

সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আইনের তোয়াক্কা না করে মফস্বলের  প্রতিটি বাজারের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মুদি দোকান, হার্ডওয়্যার, ফাস্টফুড, কসমেটিক, তেল বিক্রয়, ফ্লেক্সিলোডের দোকানসহ হাইওয়ে রাস্তার পাশে, ফুটপাতে গ্রাম্য রাস্তার মোড়ে, ফার্মেসিতে ও থান কাপড় বিক্রির দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিপদজনক গ্যাস সিলিন্ডার। সিলিন্ডারগুলো দোকানের সামনে বা ভেতরে খোলামেলা অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার ফলে যে কোনো বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির আশংঙ্কা বিদ্যমান। এ ব্যাপারে প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার আহবান জানিয়েছেন সচেতন  মহল।

বিভিন্ন উপজেলা ও মফস্বল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ভাবে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। বিক্রেতারা ইচ্ছা মতো দাম চাচ্ছেন এসব সিলিন্ডারের। সাড়ে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার গ্যাসে দাম আদায় করা হচ্ছে ৮শ থেকে ১১শ টাকা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর  ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা মজুদ আইনের অনুসরণ করছেন না। এ বিষয়ে স্থানীয়রা শঙ্কিত থাকলেও প্রশাসন নির্বিকার।

১৮৮৪ ও ২০০৪ সালের বিস্ফোরক আইনে লাইসেন্স ছাড়া এলপিজি গ্যাস বিক্রি ও মজুত নিষিদ্ধ এবং আটটি সিলিন্ডার মজুতের ক্ষেত্রে লাইসেন্স আবশ্যক। তাছাড়া প্রাথমিক বিপর্যয় রক্ষায় ড্রাই পাউডার ও কার্বন ডাই অক্সাইড সরঞ্জামসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কিন্তু কোনোটাই ঠিক মতো নেই এসব দোকানে। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন নিরব থাকায় প্রকাশ্য চলছে এমন নৈরাজ্য।

একাধিক এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতা জানিয়েছেন, এসব নিয়মনীতির বিষয়ে তাদের জানা নেই। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি ও ডিলারদের উৎসাহে বাড়তি কিছু টাকা পাওয়ার জন্য অন্য ব্যবসার পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন তারা।

সিলেট ডিভিশনাল এলপিজি গ্যাস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হামিদ টিভিথ্রিকে  বলেন, বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলছে। এর জন্য প্রশাসনের নিরবতা ও কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের খুচরা বিক্রেতাদের অতিউৎসাহই দায়ী। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ইতোমধ্যে আমরা সংগঠনিক বৈঠক করেছি।

বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে তিনি জানান,সিলিন্ডারের গায়ে নির্ধারিত মূল্য না দেয়ার সুযোগে কোম্পানিগুলোই বেশি লাভবান হচ্ছে। এখানে খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফা খুবই সামান্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট শহরের একজন নাগরিক বলেন, প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস পাওয়া যাবে বলে শুনেছিলাম, কিন্তু এই খবর আসার সাথে সাথেই বড় বড় রাঘব বোয়াল যারা এলপিজি গ্যাসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা টাকা ঢেলে এই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ভাল নয়। কারণ ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে গ্যাস দেওয়ার কথা বলেছিলেন এক প্রার্থী। পরে সেই ব্যক্তি সাংসদ হয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ের বড় চেয়ারেও বসেছেন কিন্তু গ্যাস দিতে পারেন নাই।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ সবকিছু মনে রাখে। প্রি-পেইড মিটার দিয়ে গ্যাস দিলে গ্যাসের অপব্যবহার কমতো। কিন্তু কিছু সিণ্ডিকেটের কাছে যেন জিম্মি হয়ে আছে সবাই। তাই গ্যাস সিলিন্ডারের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।


২৫ আগস্ট ২০২০
মোহায়মীন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি (সিলেট), টিভিথ্রি বাংলা
এমকেসি/এনএইচটি

আরো পড়ুন

গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা নিখোঁজের দাবি

চার বাংলাদেশিকে ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ উপাধি দিল জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক

জাতিসংঘে মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি সুপারিশ