নিতান্তই গরিব লোক কানাইঘাটের খছরু মিয়া। দিন আনেন দিন খান। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন জকিগঞ্জের শ্বশুরবাড়ি। কাজ করেন জৈন্তাপুরের লালাখালে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে গাছ থেকে পড়ে বাম হাতের কুনুইয়ের উপরের হাড় ভেঙে যায়। ডাক্তার দেখানোর পর অস্ত্রোপরের পরামর্শ দেন তারা। এরপর খছরু মিয়া ছুটে যান ওসমানী হাসপাতালের আউটডোরে। সেখানে ডাক্তার দেখানোর পর হাড় অপারেশনের জন্য ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়।
এরপর টানা এক মাস অপেক্ষার পর অপারেশনের সিরিয়াল এলে ১৭ই নভেম্বর সকালে অঅপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় খছরু মিয়াকে। খছরু মিয়া জানিয়েছেন, ‘তখন সকাল বেলা। আমাকে ওটিতে নিয়ে প্রথমে ডাক্তাররা আমার বাম হাতের ভাঙা হাতে অস্ত্রোপচার করেন। তখন আমার জ্ঞান ছিল। ডাক্তারদের কথাবার্তা শুনছিলাম। ওটি রুমে ছিলেন ৫ জন। সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছিল। হঠাৎ একজন বললো, বাদ দে গরিব লোক। অপর আরেক জন ধমক দিয়ে বললো ৫৫-৬০ বছর বেঁচে গেছে। আর বেঁচে কী করবে। এরপর ইঞ্জেকশন দিলে আমি আর কিছু বলতে পারিনি। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমার কিডনির ওখানে কাটা। চিৎকার দিয়ে বলি- আমার কিডনি ওরা নিয়ে গেছে। এ সময় নার্সরা এসে আমাকে শাসায়।
পরে আমার স্ত্রীর শান্তনায় নীরব হই।’ খছরু মিয়া জানান, ‘কিডনি চুরির ঘটনা নিশ্চিত হতে আমি সিলেট শহরে ডাক্তার ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের শরণাপন্ন হই। কিন্তু ঘটনা শুনে কেউ আমাকে দেখেনি। প্যাথলজিক্যাল সাপোর্ট পাইনি।’ এদিকে, জৈন্তাপুরের জৈন্তা ডায়গনস্টিক সেন্টারে গত ১৫ই জানুয়ারি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করান খছরু মিয়া। রিপোর্ট আসে বামপাশের কিডনি নেই। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন খছরু মিয়া। এমন ঘটনায় হতবাক তিনি। হাসপাতালে গিয়েছিলেন হাতের চিকিৎসা করাতে। এরপর দেখেন কিডনি নেই। বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনজীবীদের দ্বারস্থ হন।
গত ১লা মার্চ সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মোমেনের আদালতে তিনি বিচার চেয়ে আবেদন জানান। এ সময় আদালত খছরু মিয়ার জবানবন্দিও শুনেন। পরে কোতোয়ালি থানাকে মামলাটি রেকর্ডপূর্বক তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে, আদালতের নির্দেশ পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গত ৩রা মার্চ মামলাটি গ্রহণ করে। মামলার তদন্ত করছেন কোতোয়ালি থানার এসআই জুয়েল চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন. ‘ইতিমধ্যে তিনি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। বাদীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আদালতের নির্দেশ নিয়ে তার তত্ত্বাবধানে রোগীকে ফের প্যথলজিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। এরপর এ নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে।’ তিনি জানান, ‘তদন্তের পর্যায়ে কাউকে দোষী মনে হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর হাতের হাড়ভাঙার অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে কিডনি অপসারণের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শনিবার ৭ সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া ওইদিন দায়িত্বপালনকারীদের তালিকা চেয়েছেন আদালত। সেটিও আমরা প্রেরণ করছি।’ তিনি জানান, ‘ঘটনার খবর পেয়েই আমরা তদন্ত কমিটি করি। পরে শুনি মামলা হয়েছে। আইন আইনের মতো চলবে। ঘটনা ঘটলে অবশ্যই বিচার হবে।’