সিলেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও অলিগলিতে হঠাৎ করে দেখা মিলেছে ডা. জুবাইদা রহমানকে নিয়ে লাগানো নামবিহীন পোষ্টারের। মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত থেকেই নগরীর তালতলা, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, টিলাগড়সহ বহু স্থানে এসব পোষ্টার নজরে আসে। এতে ডা. জুবাইদাকে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তবে কারা এই পোষ্টার লাগিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
পোস্টারে বড় করে তুলে ধরা হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং ডা. জুবাইদা রহমানের ছবি। স্লোগানে লেখা— “বাংলাদেশের অহংকার, সিলেটবাসীর গর্ব—ডা. জুবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১ এর সাংসদ হিসেবে দেখতে চাই।”
নাম-পরিচয়হীনভাবে এমন প্রচার চালানোয় নগরীতে চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। কেউ এটিকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বলয় থেকে উত্থিত পরিকল্পনা মনে করছেন, আবার কেউ বলছেন—এটি সিলেট বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বিষয়টি নিয়ে বলেন, “ডা. জুবাইদা রহমান এই অঞ্চলেরই গর্ব। তবে বেনামী পোষ্টার লাগানো কোনো সুস্থ রাজনীতির চর্চা হতে পারে না। এটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ।”
এমনকি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “জিয়া পরিবারের নাম ব্যবহার করে গোপনীয়ভাবে প্রচারণা চালানো নিন্দনীয়। যেহেতু এটি সংগঠনবিহীন প্রচার, তাই এটি যে কারও চালানো হতে পারে—তবে যেই হোক, এভাবে কাজ করা ঠিক হয়নি।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ এটিকে ‘ভূয়া খেলার কৌশল’ উল্লেখ করে জিয়া পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী দাবি করেছেন, এই পোস্টারের পেছনে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘনিষ্ঠ কোনো বলয় কাজ করতে পারে। এটি হতে পারে খন্দকার মুক্তাদির বলয়কে চাপ দেওয়ার কৌশল। আবার কিছু নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক মনে করেন, সিলেট-১ আসনে স্থানীয়দের বাইরেও গ্রহণযোগ্য কোনো জাতীয় পর্যায়ের নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের ভাবমূর্তি বাড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিলেট-১ আসন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে এক সময় নির্বাচিত হয়েছেন সাইফুর রহমান, হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ও আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মতো গুণী রাজনীতিবিদরা। তাই এখানকার প্রার্থী নির্বাচনে বিএনপির হাই কমান্ডকে কৌশলী ও স্বচ্ছ হতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—এই পোষ্টারের মাধ্যমে কী ডা. জুবাইদা রহমানকে নির্বাচনী ময়দানে প্রস্তুত করা হচ্ছে? নাকি এটি শুধুই কোনো পক্ষের কৌশলগত প্রচারণা?
নগরবাসী ও দলের তৃণমূল কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, যতই নির্বাচন এগিয়ে আসবে, ততই সিলেট-১ আসনকে ঘিরে জটিলতা বাড়তে থাকবে, এবং দলীয় সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা না থাকলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া/ সিলেট ভিউ
এম.কে
১৫ মে ২০২৫