TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

সিলেট থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর

ফিচার: টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রুপ জলমহালগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওর। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-সুপারি গাছ  দেখা যায়। পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম।

এই হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, হাওরের পানি খুব পরিষ্কার হওয়ায় ওয়াচ টাওয়ার থেকে হাওরের তলদেশ দেখা যায়।

বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরে মোট জলমহাল সংখ্যা ৫১টি এবং মোট আয়তন ৬,৯১২.২০ একর। তবে নলখাগড়া বন, হিজল বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওরটির আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০০০০ একর। বর্ষায় এর পুরোটাই পানিতে ডুবে থাকলেও শীতে পানি কম থাকে। হাওরের বড় একটা অংশ তখন শুকিয়ে যায়।

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, আমরা ক’জন বন্ধু, আত্মীয় ও কলিগ নিয়ে মোট ২১ জন সিলেট শহর থেকে বাসযোগে সুনামগঞ্জের দিকে রওয়ানা হই।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যোগে টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে চাইলে, প্রথমে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বাস ভাড়া ১০০ টাকা । এরপর সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাহেববাজার ঘাট পর্যন্ত রিকশায়। বর্ষাকালে শহরের সাহেব বাড়ি নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিন বোট বা স্পিডবোট যোগে সরাসরি টাঙ্গুয়া যাওয়া যায়। ইঞ্জিন বোটে ৫ ঘণ্টায় এবং স্পিড বোটে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন বোটে আনুমানিক  খরচ হয় ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। এদিকে স্পিড বোটে খরচ হয় আনুমানিক ৭,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।

আমরা দলবল নিয়ে বিকাল ৪টায় পৌঁছে যাই সুনামগঞ্জ, হালকা নাস্তা শেষ করে ৪টা সিএনজি (ভাড়া জনপ্রতি ১০০টাকা) নিয়ে সন্ধ্যায় পোঁছে গেলাম তাহিরপুর। তাহিরপুর যাওয়ার মাঝপথে শাপলা বিল আছে, চাইলে কিছু ছবি তুলে নিতে পারেন। অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্য বিছিয়ে রেখেছে চারিদিকে।

তাহিরপুর এসে ট্রলার ভাড়া করে নিতে হবে, অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন, আমরা অবশ্য পরিচিত এক ভাইয়ের বদন্যতায় আগেই একজন মাঝির সঙ্গে যোগাযোগ করে গিয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার পর মাঝির কথা আর কাজে মিল না থাকায় অন্য নৌকা ভাড়া নিতে হলো।

এরপর পুলিশ স্টেশন গিয়ে নাম ঠিকানা এন্ট্রি করে নিবেন আর অবশ্যই থানা ইনচার্জ এর মোবাইল নম্বর নিয়ে আসবেন, বিপদে কাজে লাগতে পারে। তাহিরপুর থানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুবই আন্তরিক মনে হয়েছে। 

সারা রাত নৌকায় ভরা চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে গেলাম বারিক্কাটিলায়। জোৎস্না রাতে আকাশ ভরা তারার মেলায় কখন যে ভোর হয়েছে বুঝতেই পারিনি। রাতের হাওরের সৌন্দর্য কোনোভাবেই ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব না। বারিক্কাটিলা ঘুরে যাদুকাটা নদীর অপার সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে নৌকা চলল  ওয়াচটাওয়ারের দিকে, ওয়াচটাওয়ার থেকে চাইলে ছোট ছোট  নৌকায় চারপাশ ঘুরে দেখতে পারবেন।

সাঁতার জানলে নীলাভ এই পানিতে গোসল করার লোভ সামলাতে পারবেন না। সাঁতার না জানলে ৩০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট নিয়ে পানিতে নেমে পড়ুন।

আমরা যখন পানিতে ততক্ষণে আমাদের বাবুর্চি রান্নার কাজে ব্যস্ত, দুপুরের খাবার খাওয়ার পর চলে গেলাম  নীলাদ্রি লেক। একেকটা জায়গার সৌন্দর্য একেকরকম।

 নীলাদ্রি লেক ঘুরে আমরা ট্রলারে করে সরাসরি সুনামগঞ্জ চলে আসি। ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ করে মাঝি ভাই মনে করিয়ে দিলো এবার ফেরার পালা ।

সুনামগঞ্জে প্রকৃতি যেন তার  সৌন্দর্য মেলে ধরেছে। ব্যস্ততার ফাঁকে তাই চেষ্টা করুন ঘুরে আসতে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আপনার মনে দাগ কাটবেই।   

বি.দ্র: যেখানেই ভ্রমনে যাবেন পরিবেশ যেন আপনার দ্বারা নোংরা না হয় সেইদিকটা দয়া করে খেয়াল রাখবেন ।

লেখক: বিভাস চক্রবর্তী রনি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
এমকেসি / এনএইচ

আরো পড়ুন

পদত্যাগ করলেন ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান

তিস্তায় সব পানি আটকাতে ভারতের নতুন পদক্ষেপ

৫৮ শতাংশ কোটা খালি রেখেই শেষ হলো হজ নিবন্ধন