সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্রাকৃতিক খাল গোয়ালীছড়া এখন পরিণত হয়েছে জলাবদ্ধতার স্থায়ী উৎসে। শাহী ঈদগাহ ও টিবি গেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে আম্বরখানা, জল্লারপাড়, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর হয়ে ছড়াটি সুরমা নদীতে মিশেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজার, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই ছড়ার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে।
বর্ষার সময় টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই আম্বরখানা, বালুচর, ঘাসিটুলা, জল্লারপাড় এলাকায় হাঁটু পানির দুর্ভোগ নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। গোয়ালীছড়ার তলদেশে জমে থাকা পলিমাটি, বালু ও আবর্জনার স্তরের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ছড়ার সঙ্গে সংযুক্ত ড্রেন ও নালাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি রাস্তা ও আশেপাশের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে।
শহর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ সচেতন মহলের মতে, গোয়ালীছড়ার বালু খনন ছাড়া সিলেটের জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব নয়। বালু সরিয়ে ছড়ার গভীরতা ও প্রস্থ ফিরিয়ে আনা গেলে পানি দ্রুত সুরমায় গড়িয়ে যাবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো সংযোগগুলো পুনরায় সচল হবে।
পরিবেশগত দিক থেকেও খনন জরুরি। বর্তমানে ছড়ায় জমে থাকা পানিতে মশার বংশবিস্তার বেড়েছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। ছড়াটি পরিষ্কার ও প্রবাহমান থাকলে বাতাস পরিষ্কার থাকবে, মশা ও গন্ধ কমবে, নগরবাসী স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরে পাবে।
নগরীর বাসিন্দাদের মতে, গোয়ালীছড়া সিলেট শহরের একটি সম্ভাবনাময় সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা হিসেবেও গড়ে তোলা যেতে পারে। ছড়ার দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে, সবুজায়ন, আলোকসজ্জা ও বসার স্থান নির্মাণের সুযোগ রয়েছে, যা একদিকে জলাবদ্ধতা রোধ করবে, অন্যদিকে এটি হবে নগরবাসীর বিনোদনের আধুনিক স্থান।
সিলেট সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ছড়ার কিছু অংশে ওয়াকওয়ে ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করলেও পূর্ণাঙ্গ খনন ও পুনঃসংস্কার কার্যক্রম গৃহীত হয়নি। নগরবাসীর দাবি—গোয়ালীছড়াকে ঘিরে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হোক, যাতে শহরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান আসে।
এম.কে
১২ জুন ২০২৫