বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে প্রতিযোগিতা নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, আর এই যুদ্ধে এবার বড় বাজি ধরেছে মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা। শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটারাইজড “সুপারইন্টেলিজেন্স” অর্জনের লক্ষ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলারের একটি মেগা চুক্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এই চুক্তির আওতায় মেটা, ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক AI স্টার্টআপ Scale AI-এর ৪৯% মালিকানা অধিগ্রহণ করবে। স্টার্টআপটি প্রতিষ্ঠা করেন ২৮ বছর বয়সী প্রতিভাবান উদ্যোক্তা আলেক্সান্ড্র ওয়াং এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা লুসি গুয়ো। এক বিশ্লেষকের ভাষায়, এই পদক্ষেপ “একজন যুদ্ধকালীন CEO-র মতো সাহসী সিদ্ধান্ত”।
সুপারইন্টেলিজেন্সকে এমন একধরনের AI হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা সব ধরণের কাজেই মানুষের তুলনায় আরও দক্ষভাবে পারফর্ম করতে সক্ষম। বর্তমানে যেটা পর্যন্ত পৌঁছায়নি আধুনিক প্রযুক্তি — অর্থাৎ, আমরা এখনও AGI (Artificial General Intelligence)-এর স্তরে পৌঁছাইনি।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বহু জনপ্রিয় AI সিস্টেম জটিল সমস্যার মুখে পড়ে কার্যত ভেঙে পড়ে, যেখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীও সফলভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিনিয়োগ মেটার জন্য একটি নতুন দিক নির্দেশনা তৈরি করতে পারে। মেটাভার্সে বিপুল বিনিয়োগের পর সেটি যেমনভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছে, তেমনটাই জাকারবার্গ এই উদ্যোগের মাধ্যমে হারানো নেতৃত্ব ফিরে পেতে চাইছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মাইকেল উলড্রিজ বলেন, “আমরা কিছু দারুণ কার্যক্ষম AI তৈরি করেছি ঠিকই, তবে সেগুলো অনেক সময় এমন সাধারণ কাজেও ভুল করে বসে যেটা একজন মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থীও পারতো। সুপারইন্টেলিজেন্স তো অনেক দূরের কথা।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, Scale AI সম্প্রতি একটি চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য “ThunderForge” নামে একটি AI সিস্টেম তৈরি করছে, যা সামরিক পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক ও ইউরোপীয় সামরিক কমান্ডে প্রথম প্রয়োগ পাবে। স্টার্টআপটি প্রাথমিক পর্যায়ে পিটার থিয়েলের Founders Fund থেকে বিনিয়োগ পেয়েছিল।
এই চুক্তির পর আলেক্সান্ড্র ওয়াং মেটার একটি শীর্ষ পদে নিয়োগ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা মেটার এই সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে আহ্বান জানিয়েছেন একটি স্বচ্ছ এবং সমন্বিত ইউরোপীয় AI গবেষণা প্রতিষ্ঠানের — CERN-এর মতো একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে AI-কে উন্মুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে বিকাশ করা সম্ভব হবে।
সাররি বিশ্ববিদ্যালয়ের AI ইনস্টিটিউটের ড. অ্যান্ড্রু রোগয়স্কি বলেন, “এই চুক্তি প্রমাণ করে যে, বড় AI কোম্পানিগুলো প্রতিভা অর্জনের জন্য হন্যে হয়ে ছোট ছোট AI কোম্পানিগুলোকে কিনে নিচ্ছে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিভা দলে টানছে।”
তিনি আরও বলেন, “মেটার জন্য AI হলো ব্যবসার একটি উপায় — মূল লক্ষ্য নয়। তারা OpenAI বা Anthropic-এর মতো মরিয়া নয়, ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েই এগোতে পারছে।”
মেটা এই চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না করলেও প্রযুক্তি বিশ্বে এই ঘোষণা ইতিমধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা একে ভবিষ্যতের AI নেতৃত্ব দখলের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন। তবে সুপারইন্টেলিজেন্সের পথে সত্যিকারের অগ্রগতি কতটা হয়েছে, তা এখনো সময়ই বলবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১২ জুন ২০২৫