ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটা সময় পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এসে সেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে।
পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো ও স্থিতিশীলতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতি দুই প্রতিবেশীই আগ্রহ দেখিয়েছে। দুই দেশের সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতার ইচ্ছাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের ইতিবাচক পরিবর্তনের হাওয়া আশাব্যঞ্জক মোড় নিচ্ছে। যদিও অনেকের শঙ্কা, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মানসিকতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটবে।
কিন্তু পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকসহ সাম্প্রতিক কূটনৈতিক আদান-প্রদান নতুন সম্পর্ক বোনার আভাস দিচ্ছে। পাশাপাশি বিরোধের জায়গাগুলো মীমাংসার ক্ষেত্রেও তারা ইতিবাচক।
১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন—২০২৫ সালে এই তিন বড় শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আর ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক শুধু একটি ইস্যুতে আটকে থাকবে না, বরং আরো বিস্তৃত হবে।
কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টির সুরাহা না হলে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কিভাবে এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই এটি একটি ইস্যু, আমাদের মধ্যে আরো অনেক দ্বিপক্ষীয় ইস্যু আছে।
আমি মনে করি, দুই পক্ষ যুগপৎভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে। পারস্পরিক স্বার্থগত অনেক ইস্যু রয়েছে। একে একে আমরা এসব ইস্যু নিয়ে কাজ করব।’
কাজেই কোনো একক ইস্যুতে আমাদের সম্পর্ক আটকে থাকবে না বলে জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধে ভারত সাড়া দেবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
যদি ভারত থেকে কোনো জবাব না আসে, তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে দেশটিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হতে পারে।
গেল ৩ জানুয়ারি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমরা একটি বার্তা পেয়েছি। সপ্তাহখানেক আগে বিষয়টি আমি আপনাদের নিশ্চিত করেছি। এই মুহূর্তে এর বাইরে আপনাদের কিছু বলতে পারছি না।’
দুই দেশের মধ্যে আস্থা, সম্মান ও উদ্বেগ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক নির্মাণে ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। গেল ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরকালে তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব আরো বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল অংশীদার হলো দুই দেশের জনগণ। বাণিজ্য, কানেকটিভিটি ও অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধির খাতগুলোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগিতা ও বহুমুখী সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই করা হবে। এখন পর্যন্ত এটিই আমাদের অভিমুখ। এরই মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।’
ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক লালনে নিজেদের অভিমুখের কথা জানিয়ে দিয়েছেন তারা। এতে গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অগ্রসর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি সমর্থনের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।
এম.কে
০৫ জানুয়ারি ২০২৫