নিউজ ডেস্ক: অবশেষে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মামলা করেছেন তুরস্কে নৃশংসভাবে নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগির বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিস।
মামলায় সৌদি প্রিন্সকে খাশোগি হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নিহত সাংবাদিক খাশোগি সৌদি আরবের একজন বাসিন্দা এবং ভিন্ন মতাবলম্বী। এ কারণে তাকে টার্গেট করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি খাশোগি এবং হাতিস চেঙ্গিসের প্রতিষ্ঠা করা মানবাধিকার সংস্থার ক্ষয়ক্ষতি করেছেন।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদির কনস্যুলেটে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ খাসোগি। ওই দিন ১৫ সৌদি নাগরিকও সেখানে ঢোকেন। তাঁরা কনস্যুলেটে যাওয়ার আগে এর পাশের দুটি আন্তর্জাতিক হোটেলে ওঠেন। কনস্যুলেটের অপারেশন শেষ করে ওই দিনই তাঁরা তুরস্ক ত্যাগ করেন। তাঁদের বহনকারী ব্যক্তিগত বিমান দুটি কায়রো ও দুবাই হয়ে রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এদিকে এ ঘটনার তদন্তের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। তাঁদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন খাসোগি। এরপরই ওয়াশিংটন পোস্টে প্রতি মাসে কলাম লিখতেন। কলামে তিনি সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে নানা সমালোচনামূলক লেখা লিখেছেন। নিজের কলামেই তিনি লেখেন, সালমান বাদশাহ হলে খাসোগি ভিন্নমত পোষণের কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।
খাসোগি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে কাগজপত্র ইস্যু করার জন্য ঢোকেন। কিন্তু তাঁর পরিবার ও বন্ধুবান্ধব এবং তুরস্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি কনস্যুলেট থেকে আর বের হননি। তবে সৌদির কর্মকর্তারা খাসোগির নিখোঁজ ও তাঁর হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। তবে তাঁদের এই দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
তুরস্কের এই চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সৌদি আরব জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে তুরস্কের তদন্তকারী দল তল্লাশি করতে পারবে। পরে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কনস্যুলেট ভবনে তল্লাশির অনুমতিও আছে।
তুরস্কের পুলিশ জানিয়েছিল, জামাল খাসোগি যেদিন কনস্যুলেটে যান, সেদিন সৌদি আরব থেকে কর্মকর্তাসহ ১৫ জন ব্যক্তি দুটি ফ্লাইটে তুরস্ক পৌঁছে ইস্তাম্বুলে নিজেদের কনস্যুলেটে যান। ওই দিনই তাঁরা ফিরে যান। তুরস্কের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ইস্তাম্বুলে পাঠানো সৌদির বিশেষ দলের হাতে জামাল খাসোগি খুন হয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা।
তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি, আল-জাজিরা
৩১ অক্টোবর ২০২০