17.8 C
London
May 14, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

স্টারমারের অভিবাসন নীতির পরিবর্তনে লেবার এমপি ও নিয়োগকারীদের বিরোধিতা

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে লিখেছিলেন, “আমরা কখনোই টরি বা গণমাধ্যমের সেই বর্ণনাকে মেনে নিতে পারি না, যা প্রায়শই অভিবাসীদের দোষারোপ ও অপমান করে। নিম্ন মজুরি, আবাসন সংকট ও জনসেবা ব্যবস্থার সমস্যা অভিবাসীদের কারণে নয় — এগুলো এসেছে এক ব্যর্থ অর্থনৈতিক মডেল থেকে।”

তবে সেই সময় স্টারমার লেবার পার্টির নেতা হওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী, এবং তার সামনে রয়েছে আরও বিস্তৃত ভোটব্যাংককে সন্তুষ্ট রাখার চ্যালেঞ্জ।

স্টারমারের ঘনিষ্ঠরা দাবি করেন, তিনি অনেক আগেই কঠোর অভিবাসন নিয়মের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে রিফর্ম ইউকের উত্থান এবং প্রধানধারার রাজনীতিতে বিতৃষ্ণ ভোটারদের মধ্যে নাইজেল ফারাজের জনপ্রিয়তা এই অবস্থানকে নতুন রাজনৈতিক তাগিদ দিয়েছে।

সোমবার নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণা করে স্টারমার হুঁশিয়ারি দেন, কঠোর পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাজ্য “অজানা মানুষে ভরা এক দ্বীপে” পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, সরকার “আমাদের সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করবে” এবং ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের “কলঙ্কিত অধ্যায়” শেষ করবে।

তবে যারা মনে করেন রিফর্ম ইউকের উত্থানে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্টারমার অনেকটাই ডানপন্থী হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য এই অভিবাসন-বিষয়ক ভাষ্যটি উদ্বেগজনক।

লুটন নর্থের লেবার এমপি ও পার্টির মধ্যপন্থী অংশের সারাহ ওয়েন বলেন, যুক্তরাজ্যকে “অজানা মানুষে ভরা দ্বীপ” হয়ে ওঠা থেকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে জনগণের উপর বিনিয়োগ করা যাতে তারা উন্নতি করে।

“আমি আগেও বলেছি, আবার বলব: ডানপন্থার পেছনে দৌড়ালে তা আমাদের দেশকে অন্ধকার পথে নিয়ে যেতে পারে,” তিনি সতর্ক করেন, সরকারকে অনুরোধ করে যেন জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি না করে।

নটিংহাম ইস্টের লেবার এমপি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যের মাত্রা বেড়ে যাওয়া লজ্জাজনক ও বিপজ্জনক।

অভিবাসীরা আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু এবং পরিবারের সদস্য। অভিবাসনের কারণে ব্রিটেন ‘অজানা মানুষে ভরা দ্বীপ’ হয়ে যেতে পারে — এই কথাটি কট্টর ডানপন্থার ভয়ভীতি ছড়ানোর কৌশলের অনুরূপ।”

অনেকে আরও কঠোর মন্তব্য করেন। লেবার পার্টির দুই-সন্তান ভাতা সীমা বাতিল করার বিপক্ষে ভোট দিয়ে বরখাস্ত হওয়া স্বতন্ত্র এমপি জারা সুলতানা স্টারমারকে এনক পাওয়েলের কুখ্যাত “রক্তের নদী” বক্তৃতার অনুকরণকারী বলে অভিযুক্ত করেন।

তবে ডাউনিং স্ট্রিট সূত্রসমূহ এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলছে, প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারেন যে অভিবাসন ব্রিটেনের জাতীয় ইতিহাসের অংশ; তবে তিনি বিশ্বাস করেন, এখন আরও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এবং অভিবাসীদের সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য আরও বেশি প্রত্যাশা থাকা উচিত।

নং ১০-এর এক সূত্র জানায়, “বাস্তবতা হলো মানুষ উচ্চমাত্রার অভিবাসন নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন এবং আমরা এই ব্যবস্থাকে আরও ন্যায্য করতে চাই।” এই ইস্যুটি সেইসব লেবার সমর্থকদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যারা এখন রিফর্ম ইউকের দিকে ঝুঁকেছে।

লেবার সহযোগীরা বলছেন, সরকার জনমতের প্রতিফলন হিসেবেই কাজ করছে। তবে তারা এটাও জানে যে, তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনেকাংশে নির্ভর করছে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারার ওপর। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে নিট অভিবাসন ছিল ৭২৮,০০০।

হোম অফিসের অফিসিয়াল হিসেব অনুযায়ী, নতুন অভিবাসন নীতির অধীনে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ কম মানুষ যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৯ সালের মধ্যে নিট অভিবাসন কমে ৩ লক্ষে পৌঁছাতে পারে।

তবে স্টারমার এখন পর্যন্ত “মনগড়া, বাস্তবায়ন-অযোগ্য ও অর্জন-অযোগ্য” লক্ষ্যপূরণের পেছনে ছুটতে রাজি হননি। তবে তাকে শুধু বামপন্থীদের কাছেই যুক্তি তুলে ধরতে হচ্ছে না।

তাকে তাদেরও বোঝাতে হচ্ছে যারা বলছে, অভিবাসন নীতি ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা কমিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে বিনিয়োগ, চাকুরি এবং প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়ছে।

২০২৩ সালের মে মাসে ওয়াশিংটন সফরে তিনি একটি বক্তৃতায় ব্রিটেনীয় সংস্করণে ‘বিডেনমিক্স’ উপস্থাপন করেন রিভস। যেখানে জাতীয় অর্থনীতির ওপর জোর দেওয়া হয়।

সেই থেকে চ্যান্সেলর রিভস— বারবার বলেছেন, ব্যবসায়িকদের উচিত দেশের অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে বিনিয়োগ করা, বিদেশ থেকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভর না করা।

সোমবার স্টারমার স্পষ্টভাবে বলেন, উচ্চ অভিবাসন — বিশেষ করে স্বল্প-দক্ষ শ্রমিকদের মাধ্যমে — অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে না।

ডাউনিং স্ট্রিট সূত্র জানায়, বাজেট দায়িত্ব অফিসকে (OBR) আবারও পর্যালোচনার অনুরোধ জানানো হতে পারে, যেটি এখন অভিবাসনকে পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করে।

ডাউনিং স্ট্রিটের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সবাই অভিবাসন ও তার অর্থনৈতিক প্রভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৪ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

নাইটাজিন সেবন করে যুক্তরাজ্যের রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে

বাড়িতে থেকে কাজ করে ক্লান্ত যুক্তরাজ্যের জনগণ!

নিউজ ডেস্ক

রাজপুত্র হ্যারি ও রাজবধূ মেগানের দাম্পত্য সম্পর্কে চিড়!