TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

স্টারমারের প্রতিশ্রুতি পূরণে রিভসের পদক্ষেপ, বাজেটে আসছে দুই-সন্তান বেনিফিট ক্যাপ প্রত্যাহার

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর) র‍্যাচেল রিভস আগামী নভেম্বরে ঘোষিত বাজেটে দুই-সন্তান ভাতা সীমা (two-child benefit cap) পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এই পদক্ষেপে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৩ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি, তবে এতে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশু দারিদ্র্যের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কনজারভেটিভ সরকারের সময় চালু হওয়া এই সীমা লেবার সরকারের জন্য দীর্ঘদিন বিতর্কের বিষয় ছিল। রিভস প্রথমে এটিকে আংশিকভাবে পরিবর্তনের চিন্তা করলেও শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বাতিলের দিকে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত সূত্রে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নিজে শিশু দারিদ্র্য হ্রাসকে তার সরকারের অগ্রাধিকারের শীর্ষে রেখেছেন। তিনি চেয়েছেন, লেবার পার্টি আগামী নির্বাচনে যাওয়ার সময় যেন বাস্তবিকভাবে শিশু দারিদ্র্য হ্রাসের প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে। রিভসের এই পদক্ষেপকে সেই লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিভস বলেন, “আমাদের অর্থনীতিতে শিশুদারিদ্র্যের খরচ উপেক্ষা করা উচিত নয়। কোনো শিশুকে তার বাবা-মায়ের আয় কম হওয়ার কারণে শাস্তি পেতে হবে—এটা ঠিক নয়।” তিনি উল্লেখ করেন, অনেক পরিবারে চাকরি, অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণে হঠাৎ আর্থিক অবস্থা বদলে যায়; আবার কেউ সন্তান দত্তক নেয় বা ফস্টার কেয়ার করে—এই বাস্তবতাগুলো উপেক্ষা করা যায় না।

চ্যান্সেলরের ঘনিষ্ঠরা জানান, তার এই বক্তব্য আসলে একটি স্পষ্ট সংকেত—রিভস আংশিক নয়, পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের দিকেই যাচ্ছেন। রেজোলিউশন ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, দুই-সন্তান সীমা পুরোপুরি বাতিলে ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে ব্যয় হবে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন পাউন্ড।

এর আগে লেবার সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে এই নীতি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়নি, কারণ তারা তখন “অর্থায়ন ছাড়া প্রতিশ্রুতি” দিতে রাজি ছিলেন না। ক্ষমতায় আসার পরও প্রধানমন্ত্রী স্টারমার নীতিটি সমর্থন করে সাতজন লেবার এমপিকে স্থগিত করেছিলেন, যারা এই সীমা বাতিলের দাবিতে ভোট দিয়েছিলেন।

তবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজিট ফিলিপসনের নেতৃত্বে গঠিত একটি টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুই-সন্তান সীমা সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়াই শিশু দারিদ্র্য কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ফিলিপসনের সুপারিশ বাজেট ঘোষণার সময় প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

চাইল্ড পোভার্টি অ্যাকশন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী অ্যালিসন গারনহাম এই পদক্ষেপকে “শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “সব শিশুই একটি ভালো শৈশবের অধিকারী। এই নিষ্ঠুর নীতি বাতিল করলে লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনে উন্নতি আসবে।”

রিভসের এই ঘোষণা এমন সময় এলো যখন তিনি বাজেট ঘোষণার আগে অফিস ফর বাজেট রেসপন্সিবিলিটি (OBR)-এর কাছ থেকে প্রাথমিক পূর্বাভাস পেয়েছেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন—যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই সীমা বাতিলের জোরালো সমর্থক।

এদিকে, রিভস আয়ের উপর কর বাড়ানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছেন, যা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। তিনি বিবিসিকে বলেন, “ম্যানিফেস্টো মেনে চলা সম্ভব, তবে তাতে আমাদের রেল, সড়ক, জ্বালানি ও ডিজিটাল প্রকল্পে বড় কাটছাঁট করতে হতো—যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।”

তিনি এমন একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছেন যেখানে আয়কর ২ পয়েন্ট বাড়িয়ে জাতীয় বীমা (National Insurance) ২ পয়েন্ট কমানো হবে। এতে ৬ বিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব আসবে এবং মধ্যম আয়ের কর্মীরা সুরক্ষিত থাকবেন, তবে পেনশনভোগী ও উচ্চ আয়ের জমিদারদের উপর বাড়বে করের চাপ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি জাতীয় বীমা হ্রাসের সুবিধা ৫০ হাজার পাউন্ড বা তার কম আয়কারীদের মধ্যে সীমিত রাখার কথা ভাবছেন—যা শীর্ষ ২৫% আয়কারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কর বৃদ্ধি বয়ে আনবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

গুরুতর যৌন অপরাধীদের জন্য যে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার

ব্ল্যাকওয়াল টানেল টোল: সতর্ক করলেন যুক্তরাজ্যের সাংসদ

আকস্মিক বন্যার কবলে লন্ডন, বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক