বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক অবশেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েছেন। নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মাইক্রোবাসে তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
টানা ৩২ ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে অনশনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সমন্বয়করা। ছাড়া পাওয়া সমন্বয়কেরা হলেন- নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুম। নুসরাতসহ ছয়জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়ে দুই সমন্বয়ক সারজিস ও হাসনাত তাদের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন। তবে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর তাদের আইডি হ্যাক হয়ে যায়।
সারজিস তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি।’ তিনি আরও লিখেন, ‘৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়। কিন্তু এই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে কিভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন, প্রতিনিয়ত সেগুলো কিভাবে নিবৃত করবেন?’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে সারজিস তার লেখেন, ‘আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর আঘাত করেছেন। সারা দেশে আমার স্কুল কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন। মাশরুর তার উদাহরণ।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘যারা একটিবারের জন্যও এ আন্দোলনে এসেছে, তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেপ্তারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে, যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিত ছিল না! রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কি ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আরও লিখেছেন, ‘এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যে কোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; ততদিন এ লড়াই চলবে।’
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘এই গণগ্রেপ্তার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়; বরং আমাদের সমগ্র সমাজের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন। এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত। আমাদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়; বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও লিখেন, ‘এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। গণগ্রেপ্তার গণঘৃণার নামান্তর।’
সূত্রঃ সমকাল
এম.কে
০১ আগস্ট ২০২৪